টানা ৮৬ দিন বন্ধ স্কুল-কলেজ! কমানো হোক অতিরিক্ত ছুটি! উঠছে দাবি

টানা ৮৬ দিন বন্ধ স্কুল-কলেজ! কমানো হোক অতিরিক্ত ছুটি! উঠছে দাবি

কলকাতা: চোখ রাঙাচ্ছে করোনা৷ বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা৷ বাংলায় এখনও পর্যন্ত মেরেকেটে ১০০-র কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা৷ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ একই সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলার সমস্ত স্কুল কলেজে ছুটির মেয়াদ এক ধাক্কায় বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷  সবমিলিয়ে টানা ৮৬দিন বন্ধ থাকছে স্কুল-কলেজ৷ আর এই পরিস্থিতিতে কীভাবে হবে সিলেবাস শেষ? স্কুল-কলেজে পঠনপাঠন কি এবার অনলাইন কেন্দ্রিক হতে চলেছে? কেন কমানো গেল না গরমের ছুটির মেয়াদ? দীর্ঘ স্কুল ছুটি ঘিরে এবার প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে শিক্ষক মহলের একাংশ৷

আজ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, যেহেতু বাংলায় আমাদের স্কুল ছুটি পড়ে ১০ জুন থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে৷ কয়েক বছর বেশি করে গরমটা পড়ার জন্য আমরা ছুটি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম৷ যেহেতু ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন থাকছে এবং স্কুল-কলেজ জুন মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ রেখে দিয়েছি, এই কারণে, গরমের ছুটিতে একসঙ্গে এডজাস্ট হয়ে যাবে৷ আর দু’একদিনের জন্যও স্কুল খোলা দরকার নেই৷ কারণ কোয়ারেন্টিনের জন্য অনেক সময় স্কুল নেওয়া হয়েছে৷ সেগুলি পরিষ্কার করতে হবে৷ অনলাইনে কলেজ, ইউনিভার্সিটির যা করবে ভালো করে৷ আমরা পড়ুয়াদের উত্তীর্ণ করে দিয়েছি৷ পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত৷’’

ইতিমধ্যেই মে মাসের শুরুতেই স্কুলগুলিতে মিড ডে মিল পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সরকারি স্কুলের ছুটির তালিকায় ২৩ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত গরমের ছুটির কথা উল্লেখ করা আছে৷ শিক্ষকমহলের একাংশ মনে করেছিলেন, লকডাউন বাড়লে গরমের ছুটি কাটিয়েই স্কুল খুলতে পারে৷ আজ নবান্নে থেকে কার্যত সেই ঘোষণাই করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এর আগে করোনা সংক্রমণ রুখতে রাজ্য সরকারের তরফে একটি বিবৃতি জারি করে জানানো হয়, সরকারি, বেসরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সমস্ত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা ১৬ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে৷ কিন্তু, পরিবর্তী সময়ে ২৩ মার্চ থেকে বাংলায় লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় স্কুল বন্ধ থাকার মেয়াদও বৃদ্ধি হয়৷ এবার সেই লকডাউনের মেয়াদ আরও এক দফায় ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে৷ পয়লা মে থেকে ২৩ মে স্কুল খোলা কথা থাকলেও তা হচ্ছে না৷ গরমের ছুটি ৭ জুন কাটিয়ে ১০ তারিখের পর খুলবে স্কুল৷ অর্থাৎ ১৬ মার্চ থেকে ১০ জুন  ৮৬ দিন ছুটি৷ এর আগেও গতবছর ফণী ও গরমের ছুটি মিলিয়ে টানা ৫৯ দিন ছুটির ঘোষণা করা হয়েছিল৷ এবার করোনা ও গরমের ছুটি মিলিয়ে টানা ৮৬ দিন বন্ধ বাংলার স্কুল-কলেজ৷

শিক্ষক মহলের একাংশ মনে করছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় লকডাউন মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা যথাযথ৷ তবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত লকডাউনের পর কেন স্কুল কলেজ খোলার ব্যবস্থা করা গেল না? কেন কমিয়ে আনা গেল না গরমের ছুটির মেয়াদ? সেখেত্রে আব পরবর্তীকালে আবহাওয়া পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে গরমের ছুটি বাড়ানো কিংবা কমিয়ে আনার বিষয়ে পরবর্তী চিন্তাভাবনা করা যেতে পারত৷ কিন্তু তার আগেই এক ধাক্কায় ৮৬ দিন স্কুল হলে কীভাবে চলবে পঠন-পাঠন? পড়ুয়াদের মধ্যে তার কি কোনও প্রভাব পড়বে না? এই ব্যবস্থা কি গৃহশিক্ষকতায় আরও আগ্রহী করে তুলবে? প্রশ্ন তুলছেন একাংশ৷

শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘পরিস্থিতি কোন দিকে এগোচ্ছে আমরা কেউ তা জানি না৷ একথা ঠিক এই মুহূর্তে ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে হয়ত রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন৷ এই সীমাবদ্ধ অবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠন চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনলাইন ব্যবস্থাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে৷ সরকারি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে তার ব্যবস্থা করা হলে গ্রামাঞ্চলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে তা সহজে পৌঁছাবে৷ সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে আবেদন তাঁরাও যাতে যথাসম্ভব অনলাইন ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য করতে পারেন তার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে৷ সরকারিভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমরা যদি সেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি তাহলে কিছুটা হলেও এই পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের অভাব পূরণ করতে পারব৷’’

শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে, মানুষের বেঁচে থাকাটাই যেখানে একটা চ্যালেঞ্জ, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি চালু রাখা বা বন্ধ রাখাটা গৌণ৷ শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে যাতে অনলাইন মাধমে পঠনপাঠনের কাজ আরও ব্যপকভাবে চালু করা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে৷ পঠনপাঠনের স্বাভাবিক গতি বিঘ্নিত হলেও, তা যেন সম্পূর্ণরূপে স্তব্ধ না হয়ে যায়৷ সেদিকে নজর দিতে বলব রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরকে৷’’ অল পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন গরাই বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুল খোলা অসম্ভব৷ তাই রাজ্য সরকার খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ একটিভিটি টাস্কগুলি আরো বেশি করে দিয়ে শিক্ষা দপ্তরকে একটি সুস্পষ্ট নোটিফিকেশন বের করতে হবে৷ এছাড়াও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির অসমাপ্ত পরীক্ষা নিয়ে অতিসত্বর একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷’’

বিজেপি টিচার্স সেলের প্রাথমিক শাখার রাজ্য কো-ইনচার্জ সব্যসাচী ঘোষ, ‘‘বর্তমান অবস্থায় স্কুল-কলেজ খুলে রাখার মতো পরিস্থিতি নেই৷ তবে পঠন পাঠন ব্যবস্থা প্রাথমিক থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চালু রাখার জন্য অনলাইন ক্লাস দূরদর্শনের মাধ্যমে হলে আরও বেশি সংখ্যক ক্লাস বাড়িয়ে তা সম্প্রচারিত হলে ছাত্র-ছাত্রীরা খুব উপকৃত হতো৷ বেসরকারি নিউজ চ্যানেলগুলিকে সরকারি অর্থ ঘুরপথে পাইয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ কয়েকটি নিউজ চ্যানেলকে নির্বাচন করা হয়েছে৷ আমরা বিজেপি টিচার্স সেলের পক্ষ থেকে দাবি রাখছি, তাদের সঙ্গে যে অর্থের রফা হয়েছে তা প্রকাশ করা হোক৷ কেননা, প্রথমে ফ্রিতে অনুষ্ঠান করার দাবি জানানো হলেও এখন রাজ্য সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত অনলাইন ক্লাসে বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে৷ সরকারি অনুষ্ঠানে কেন বেসরকারি সংস্থার বিজ্ঞাপন?’’

অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর বলেন, ‘‘এই ছুটির যেমন প্রয়োজন ছিল, তেমনি এর ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষা বর্ষ পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে৷ কিন্তু গরমের ছুটি, পুজোর ছুটি, সরকারি নানা ছুটি কমালে অনেকটা মেক-আপ দেওয়া সম্ভব৷ তাতে সেশান পেছানো অনেকটা কম হতে পারে৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের জন্য এই ছুটি কমানো বা শনিবারে ক্লাস করা ইত্যাদি বিষয়ে ভাবতে হবে৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *