কলকাতা: দীর্ঘ আইনি জটিলতা কাটিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে অবশেষে বাড়ি ফিরতে চলেছে ব্রুনো৷ ফের মনিবের কাছে ফিরে যাবে সে৷ দেবশ্রী রায়ের অ্যানিম্যাল ফাউন্ডেশন থেকে বিজয়নগড়ে ফিরবে ব্রুনো৷
আরও পড়ুন- এসপি’কে ধমক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, ‘মেরুদণ্ডে আঘাত’ বলে নিন্দা রাজ্যপালের
ব্রুনো৷ আদর করে পোষ্য সারমেয়র নাম দিয়েছিলেন কলকাতার বিজয়গড়ের বাসিন্দা সুপর্ণা মীরবাহার৷ ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর হঠাৎ বাড়ি ছেড়ে পালায় ব্রুনো৷ প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে চলে আসে হাওড়ার পাঁচলায়৷ ব্রুনোকে আটক করে পাঁচলা থানার পুলিশ। কিন্তু মনিবের খোঁজ না মেলায় তাকে থানাতেই আটকে রাখা হয়৷ এদিকে ব্রুনোকে না পেয়ে দিশেহারা সুপর্ণাদেবী ছুটে যান যাদবপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি লেখাতে৷
এদিকে, ব্রুনোর আচরণে অস্থির হয়ে ওঠে পাঁচলা থানার পুলিশ৷ মনিবের খোঁজ না পেয়ে ব্রুনোকে তুলে দেওয়া হয় দেবশ্রী রায়ের অ্যানিম্যাল ফাউন্ডেশনের হাতে। সেখানেই দিন কাটছিল সারমেয়টির। এদিকে ব্রুনোর খোঁজ না পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সুপর্ণাদেবী। মামলা দায়েরের পরে পুলিশ ব্রুনোর বিষয়টা জানতে পারে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, ব্রুনোর মনিবই নাকি তাকে ছেড়ে দিয়ে এসেছেন সেখানে। কারণ তিনি আর সারমেয়টিকে তার সঙ্গে রাখতে চাইছিলেন না।
পুলিশের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন ব্রুনোর মনিব সুপর্ণা মীরবাহার। বুধবার শুনানির সময় কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ব্রুনোকে যে চিকিৎসক দেখছিলেন, তিনি যেন কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিপোর্ট পেশ করেন৷ ওই সারমেয়টিই যে ব্রুনো, তা আদালতের জানা দরকার। কিন্তু চিকিৎসকের রিপোর্টে সন্তুষ্ট হতে পারেনি আদালত।
এর পর আদালত সুপর্ণাদেবীকে দেবশ্রী রায়ের অ্যানিম্যাল ফাউন্ডেশনে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আদালত বলে, সুপর্ণাদেবীর সঙ্গে ব্রুনোর আচরণ দেখার পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মনিহকে দেখে লেজ নাড়ে ব্রুনো৷ আদালতের নির্দেশমতো ব্রুনোর সঙ্গে তাঁর দেখা করার ছবি এদিন শুনানি পর্বে পেশ করা হয়। বিচারপতি রাজশেখর মান্থা বলেন, কোনও পশুর প্রকৃত অভিভাবক কে, তা জানা আদালতের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে, পশুদের যাতে ক্ষতি না হয় এবং তারা যাতে প্রকৃতভাবে লালিত পালিত হয় সে বিষয়ে অবশ্যই আদালত নজর দেবে। যেহেতু সুপর্ণাদেবী কুকুরটিকে লালন পালন করতে চাইছেন সেক্ষেত্রে অসুবিধে কোথায়?
সরকারি আইনজীবী পিন্টু দেবরায় আদালতে জানান, আদালত যে নির্দেশ দেবে প্রশাসন তা পালন করতে প্রস্তত। এরপরেই বিচারপতি তাঁর নির্দেশে জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে ব্রুনোকে সুপর্ণাদেবীর কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। একইসঙ্গে ব্রুনোকে দেখাশোনা করার জন্য অ্যানিম্যাল ফাউন্ডেশনের যা খরচ হয়েছে, তাও মিটিয়ে দিতে হবে মীরবাহার পরিবারকে। অন্যদিকে, সুপর্ণাদেবীর পরিবার ব্রুনোর সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দেবশ্রী রায়ের অ্যানিম্যাল ফাউন্ডেশনকে। আদালতের নির্দেশ, মাসে অন্তত একবার বিজয়গড়ের বাড়িতে যেতে হবে ফাউন্ডেশনের সদস্যদের৷