কলকাতা: দুর্গা পুজোর ক্লাবকে সরকারি অনুদান মামলায় ফের হাইকোর্টে ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার৷ আদালতের প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকারের ভূমিকা৷ মামলার রায় ঘোষণা করে পুজোর অনুদানে পুংখানুপুংখ হিসাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকারি অনুদানের ৭৫ শতাংশ টাকা মাস্ক ও স্যানিটাইজার কিনতে হবে৷ অনুদানের টাকা কীভাবে খরচ করা হল, তা হিসাব দিতে হবে৷ তবে, রাজ্য সরকার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করছে কি না কিংবা রায় পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানানো হবে কি না, তা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷
আজ মামলার রায় ঘোষণা করে হাইকোর্টের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকারের দেওয়া টাকা কোনও অলংকারিক অনুষ্ঠান, কার্যকর্তাদের বিনোদনের জন্য খরচ করা যাবে না৷ ২৫ শতাংশ টাকা পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে৷ বাকি ৭৫ শতাংশ টাকা খরচ করতে হবে মাস্ক-স্যানিটাইজার কেনার জন্য। বিল-ভাউচার সমেত সব হিসাব সরকারকে বুঝিয়ে দেবে পুজো কমিটিগুলি৷ আজ যে যে নির্দেশ আদালত থেকে দেওয়া হবে, তা লিফলেট আকারে ছাপিয়ে পুজো কমিটিগুলিকে দেবে পুলিশ৷ আর এই কাজ সম্পূর্ণ হল কিনা তা হলফনামা দিয়ে জানাবে ডিজিকে৷
আজ মামলার শুনানিতে রাজ্যকে একের পর এক প্রশ্নে জর্জরিত করে আদালত৷ মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘যেখানে মহামারী আইনে মাস্ক না পরা অপরাধ বলে গণ্য করা হয়, সেখানে আপনারা ভাবছেন, লোক মাস্ক না পরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসবেন, আর আপনারা তাঁদের মাস্ক পরাবেন!’’ পুজোর অনুদান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে বিজ্ঞপ্তির ফাকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত৷ হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘মুখমন্ত্রী টাকা দেওয়ার সময় যে কারণে টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন, আর পরে বিজ্ঞপ্তিতে যা বলেছেন, তা মিলছে না৷’’
এরপর রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকাকে কাঠগড়ায় তুলে হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘দল নির্বিশেষে আপনারা প্রত্যেকে আমলাতন্ত্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন৷ আমলাতন্ত্র মজবুত হলে এই অবস্থা হয় না৷ বিচার-বুদ্ধি-বিবেচনায় আমলারা আপনাদের থেকে অনেক এগিয়ে৷’’ বিচাপতির আরও পর্যবেক্ষণ, ‘‘অনুদানের ৫০ হাজার টাকা পুজো কমিটিগুলি কী ভাবে ব্যবহার করবেন সেটাও বলেননি মুখ্যমন্ত্রী৷’’ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা এবং পয়লা অক্টোবর রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তির মধ্যে কোনও সামঞ্জস্যতা নেই বলেও মন্তব্য বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ আজ মামলার শুনানিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ক্লাবগুলিকে বলেছেন, পুজো কমিটিগুলির বাজেটে আমি এইটা অনুদান দিলাম৷ কিন্তু কোথাও তিনি স্পষ্ট করেনি, এই করোনা আবহে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের জন্যই এই টাকাটা দেওয়া হচ্ছে৷’’
আদালতের এই পর্যবেক্ষণের পর রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত সাফ জানান, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্যে না গিয়ে সাংবিধানিক বিষয় নিয়েই থাকা উচিত৷’’ এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের অংশ৷ তাই সেটাকে বাদ দিয়ে কোন কিছুই হয় না৷’’ পুজোয় অনুদান দেওয়া ৫০ হাজার টাকার কীভাবে দেওয়া হচ্ছে, কীভাবে টাকাটা খরচ করা হচ্ছে, সমস্তটা নজরদারি করার প্রয়োজনীয়তা আছে মন্তব্য বিচারপতির৷ এদিনের মামলার শুনানিতে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য ও রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে উদ্দেশ্য করে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘রাজ্যে যারাই ক্ষমতায় এসেছেন, দুটো সরকার মিলেই আমলাতন্ত্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন৷ আমলাতন্ত্র মজবুত হলে এই অবস্থা হয় না৷ বিচার-বুদ্ধি-বিবেচনায় আমলারা আপনাদের থেকে অনেক এগিয়ে৷’’ আজ বিকেলে এই মামলা রায় ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷