কলকাতা: আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে তৃণমূল কর্মী খুনের মামলা রাজ্যের তরফে তুলে নেওয়াকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টে ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য৷ মঙ্গলবার বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতি টিভি রাধাকৃষ্ণাণ ও বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চেডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছেন আনিসুর রহমান৷ সেই মামলার শুনানি হওয়ার আগেই মামলা তুলে নেওয়ার সংক্রান্ত আরও একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে কড়া পর্যেবক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের প্রাধান বিচারপতির৷ ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করাও জঘন্য অপরাধ বা heinous crime, মামলায় পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির৷
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই একাধিক খুনের মামলা, অপহরণের মামলা এবং খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলা প্রত্যাহার করেছে অথবা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই অভিযোগে হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে জনস্বার্থ মামলা৷ অভিযোগ, ২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য৷ প্রায় ১৩টি মামলা তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলকারী৷ সেই মামলার দ্রুত শুনানির জন্য আজ প্রধান বিচারপতি কাছে আবেদন জানান মামলাকারী৷ তখনই এই মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি৷ আগামী শুক্রবার শুনানি৷
অন্যদিকে, এই মামলার সঙ্গে খুবই প্রসঙ্গিক হয়ে উঠেছে আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে তৃণমূল কর্মী খুনের মামলা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত৷ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিলেন, আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে৷ ২০১৯ সালের দুর্গা পুজার নবমীর দিন রাতে পাঁশকুড়ার ব্লক সভাপতি কুরবান শাহ খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হন আনিসুর রহমান৷ কুরবান খুনের ঘটনায় আনিসুরের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ সরকারের তরফে প্রত্যাহারকে চ্যালেঞ্জ করে মঙ্গলবার দুপুরে কুরবানির ভাগনা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন৷ যদিও, এর আগে একাধিকবার জামিনের আর্জি জানান আনিসুর রহমান৷ ২৬ ফেব্রুয়ারির আগে পর্যন্ত রাজ্যের তরফে জামিনের বিরোধিতা করা হয়৷ কিন্তু, ভোটের মুখে আচমকা কেন খুনের মামলা তুলে নিতে চাইছে রাজ্য? গতকালই প্রশ্ন তুলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট৷
কীসের ভিত্তিতে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য রাজ্যের বিজ্ঞপ্তি এবং তমলুক আদালতের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করলেন, আনিসুর রহমানের পক্ষের আইনজীবী প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, আত্মপক্ষ সমর্থনের আনিসুর রহমানের বক্তব্য শোনা হয়নি৷ তমলুক আদালতের নির্দেশ নামা বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য দেখেননি বলেও তোলা হয় গুরুতর অভিযোগ৷ একজন ব্যক্তির বক্তব্য না শুনে কীভাবে রায় দিলেন, প্রশ্ন আনিসুর রহমানের আইনজীবীর৷
পাঁশকুড়ায় তৃণমূল নেতা কুরবান আলি শাহ খুনের ঘটনায় জেলবন্দি আনিসুর রহমানের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন মঙ্গলবার খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট৷ তমলুক আদালতের নির্দেশ খারিজ করে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ৷ তমলুক আদালতের নির্দেশে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় আনিসুরকে৷ পরে হাইকোর্টে ধাক্কা খাওয়ার পর কোলাঘাট থেকে ফের গ্রেফতার করা হয় খুনের মামলায় ধৃতকে৷ মুক্তির দু’ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে ফের করা হয় গ্রেফতার৷ তৃণমূল নেতাকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে কেন তৃণমূল পরিচালিত সরকার মমতা তুলতে নিতে চাইছে? উঠতে থাকে প্রশ্ন৷ কেন মামলা তুলে নেওয়ার নির্দেশিকা জারি করা হল রাজ্যের তরফে, তা স্পষ্ট নয় বলেও উল্লখ করেছেন বিচারপতি৷ ইচ্ছে মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না বলেও পর্যবেক্ষণে জানায় আদালত৷ খারিজ করে দেওয়া হয় অনিসুরের মুক্তির আর্জি৷ সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে আজ ফের হাইকোর্টে আনিসুরের আইনজীবী৷