বিচারপতির বাক্যবাণে চর্চায় ১৭ নম্বর এজলাস! অভিজিৎগঙ্গোপাধ্যায়ের সাড়া জাগানো ৬ মন্তব্য

বিচারপতির বাক্যবাণে চর্চায় ১৭ নম্বর এজলাস! অভিজিৎগঙ্গোপাধ্যায়ের সাড়া জাগানো ৬ মন্তব্য

2a3599e6746146f36b2d51a6d6c63603

কলকাতা: কলকাতা হাই কোর্ট চত্বরে এই মুহূর্তে সবচেয়ে চর্চিত নাম অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ এসএসসি-র একাধিক দুর্নীতি সহ বিভিন্ন মামলায় তাৎপর্যপূর্ণ রায়ে তিনি হয়ে উঠেছেন জনগণের বিচারপতি৷ সাম্প্রতিককালে উচ্চ আদালতের যে সকল মন্তব্য সাড়া ফেলেছে, তার ৯০ শতাংশই এসেছে ১৭ নম্বর এজলাস থেকে৷ আলোড়ন জাগিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে সকল চোখা চোখা মন্তব্য করেছেন, রইল তারই ছ’টি উদাহরণ৷  

আরও পড়ুন- মন্ত্রী কন্যার জায়গায় চাকরি পাবেন ববিতাই, স্পষ্ট নির্দেশ আদালতের

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে ১৭ নম্বর এজলাস বয়কট করেছিলেন আইনজীবীদের একাংশ। সেই সময় আইনজীবীদের এহেন আচরণে গর্জে উঠেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি সরাসরি বলেছিলেন, ‘‘আপনার হয়তো রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে। কিন্তু দুর্নীতি দেখলে আদালত চুপ থাকবে না। মাথায় বন্দুক ধরতে পারেন। মারতে পারেন। মরতে রাজি আছি। কিন্তু দুর্নীতি দেখলে চুপ করে থাকব না। আওয়াজ তুলবই। যারা দুর্নীতি করছে তাদের সঙ্গে শুধু শত্রুতাই থাকতে পারে।”  

তেমনই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মানবিক রায়’-এর অন্যতম নজির ছিল ৭৬ বছরের শ্যামলী ঘোষের মামলা। ৩৬ বছর লড়াই শেষে তাঁকে জয়ের হাসি উপহার দিয়েছিলেন তিনি৷ ৭৬ বছরের বৃদ্ধা শিক্ষিকার সমস্ত বেতন এরিয়ার সহ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রায় ঘোষণার পর এজলাসেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সত্তরোর্ধ্ব শ্যামলী৷  দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছিলেন অভিজিৎকে।  সেই মমলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, “আমার ঘরে আসা বৃদ্ধ নাগরিককে খালি হাতে ফেরাতে পারি না।”

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে সকল তাৎপর্যপূর্ণ রায় দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীকে স্কুল শিক্ষিকার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা৷ শুধু তাই নয়, চাকরির প্রথম দিন থেকে বেতন ফেরতের নির্দেশও দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর ছেড়ে যাওয়া ফাঁকা পদে ন্যায্য প্রার্থী মামলাকারী ববিতা সরকারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি।  

এর পর বলতেই হয় একের পর এক এসএসসি মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানের কথা৷ যা নিয়ে তোলপাড় হয় গোটা রাজ্য৷ কিন্তু, সিবিআই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে চরম হতাশা ব্যক্ত করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ডজন খানেক সিবিআই তদন্ত শেষে নোবেল পুরস্কার হবে না তো! মনে হচ্ছে সিবিআই-এর থেকে সিট ভাল। টানেলের শেষে কোনও আলো দেখতে পাচ্ছি না। নভেম্বর মাসে প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলাম। এরপর থেকে কী হয়েছে? কিছুই নয়।” 

এসএসসি নিয়োগ মামলায় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে সওয়াল করছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জেলে ঢোকাব বলে যদি আদালত মাইন্ডসেট করে থাকে, তবে আপত্তি নেই। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে?” তাঁর এই বক্তব্যের পরেই আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা প্রশংসায় মুখর হয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটা দেখে ভাল লাগছে একজন রাজনীতিবিদ যে কোনও সময়ে ভাল আইনজীবী হতে পারে৷’’ এমনকী আলাপচারিতায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এও বলেছিন, ‘‘আমি তো আপনার ভক্ত। আপনার মতো লোক ক’জন আছে?”

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে নবতম সংযোজন হল ‘হাইকোর্টের জ্যাঠামশাই’ মন্তব্যে। চাঁচাছোলা ভাষায় তিনি বলেন, ‘কোনও এক জ্যাঠামশাই বলে বেড়াচ্ছেন অভিজিৎবাবু এটা করেননি অভিজিৎবাবু ওটা করেননি। কে এটা করছেন আমি জানি। তাঁর বিরুদ্ধে আমি তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছি। এক-দু’মাসের মধ্যে তিনি টের পাবেন। তিনি এও বলে বেড়াচ্ছেন, আমি আইনের এ-বি-সি-ডি জানি না!”