কলকাতা: দুর্গা পুজোর ক্লাবকে কেন অনুদান? প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে আগেই দায়ের হয়েছিল জনস্বার্থ মামলা৷ সিটু নেতা সৌরভ দত্তের মামলার শুনানিতে আজ ফের হাইকোর্টের প্রশ্নের রাজ্য সরকার৷ করোনা আবহে ক্লাবকে টাকা দেওয়ার যুক্তি কী? পুলিশ যদি সব কাজ করে, তাহলে ক্লাবকে কেন অনুদান? এজলাসে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরাসরি উদ্বেগ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ৷ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধর্মের নামে অনুদান দেওয়ার ভেদাভেদ করা যায়? চরম উষ্মা প্রকাশ আদালতের৷
কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে মামলাকারীর তরফে দাবি করা হয়েছিল, সরকারি অনুদান দেওয়ার ঘোষণা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী৷ একই সঙ্গে পুরোহিতদের কেন ভাতা দেওয়া হবে? তা নিয়েও মামলার আবেদনে যুক্ত করা হয়৷ আজ ছিল সেই মামলার শুনানি৷ শুনানি পর্বে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের সমালোচনার মুখে পড়তে হল রাজ্যকে৷
আদালতের প্রশ্ন, অনুদান কি শুধুমাত্র দুর্গা পুজাতেই দিয়ে থাকে সরকার? নাকি অন্য উৎসবেও দেওয়া হয়? ইদেও কি একই অনদান দেওয়া হয়েছিল? রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, দুর্গাপুজো নিয়ে আমরাও গর্বিত, কিন্তু তাই বলে কি যেভাবে ইচ্ছা টাকা দেওয়া যায়? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কি এই ভেদাভেদ করা যায়? আপনারা (সরকার) বলছে, এই টাকা দেওয়া হচ্ছে মাস্ক-সেনিটাইজার কেনার জন্য৷ এটা তো সরকার নিজেই কেন্দ্রীয়ভাবে কিনে বিলি করতে পারত৷ তাতে খরচ কম হত৷ তাহলে ক্লাবকে কেন অনুদান৷
এদিনের মামলার শুনানিতে আদালত একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলেছে৷ শুনানিতে আদালতের প্রশ্ন, যেখানে সংক্রমণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ, সেখানে পুজোর অনুমতি কীভাবে দেওয়া হচ্ছে? কী কী সুরক্ষা বিধি মানা হচ্ছে? ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্লু-প্রিন্ট কী? সব কাজ পুলিশ করলে ক্লাবকে টাকা দেওয়ার কি যুক্তি? রাজ্যকে গুচ্ছ প্রশ্নে বিঁধেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আদালতের তরফে তোলা সমস্ত প্রশ্নের জবার শুক্রবারের মধ্যে হাইকোর্টে পেশ করতে হবে রাজ্যকে৷ সেই জবাবে উপর নির্ভর করছে মামলার পরবর্তী শুনানি৷
তৃণমূল সরকারের আমলে ২০১৮ সালের দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে ১০ হাজার টাকা করে পুজোর অনুদান নিয়ে আসছে রাজ্য সরকার৷ ২০১৯ সালে তা এক লাফে বেড়ে হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা৷ এবার করোনা আবহে সেই অনুদান ৫০ হাজার করে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মামলাকারীর অভিযোগ, সরকারি এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিতে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে৷ ফলে, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন দুর্গাপুরের আইএনটিইউসি নেতা সৌরভ দত্ত৷ আজ সেই মামলার শুনানিতে পুজোর অনুদান নিয়ে রাজ্যের দিকে গুচ্ছ প্রশ্ন তুলেছে আদালত৷ পুজোর অনুদান নিয়ে আদালতের এই প্রশ্ন, যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷
পুজো কমিটিকে অনুদান দেওয়ার বিষয়ে মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল, রাজ্য বয়ান বদল করে একসময় ট্রাফিক পুলিশের ‘সেফ ড্রাইভ-সেভ লাইফ’ প্রজেক্টে এই টাকা দিচ্ছে৷ এই নিয়েও দায়ের হয়েছিল মামলা৷ স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট৷ সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়৷ রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের মাধ্যমে টাকা দেওয়া যাবে বলে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদলত৷ তবে সেই মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি৷ জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করে রাজ্য৷ একই সঙ্গে রাজ্য পুরোহিত ভাতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ দুর্গাপুজো কমিটিকে করোনা আবহে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে৷ মামলাকারীর অভিযোগ, এই ঘোষণা ধর্মনিরপেক্ষতাকে আঘাত করা হয়েছে৷
গত ২৪ সেপ্টেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুজো কমিটিগুলির বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, করোনার কারণে এবার মাথ হাত পড়েছে পুজো কমিটিগুলির৷ বিজ্ঞাপন নেই৷ ফলে, পুজো করতে যাতে কমিটিগুলিকে যাতে কোনও সমমস্যায় পড়তে না হয়, তার জন্য এবার পুজোর অনুদান দ্বিগুণ বৃদ্ধির ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ জানান, এবার পুজোয় দমকম ও প্রশাসন কোনও অর্থ নেবে না৷ বিদ্যুতে মিলবে ৫০ শতাংশ ছাড়৷ সঙ্গে এবার মিলবে ৫০ হাজার টাকা অনুদান৷
এর আগে ২০১৮ সালে ১০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে করা হয় ২৫ হাজার৷ মহিলা পরিচালিত পুজোগুলি বাড়তি আরও ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতা দুর্গাপুজোর বিরোধী বলে বিজেপি যে-প্রচার চালাচ্ছে, তাতে জল ঢেলে অনুদান দ্বিগুণ বৃদ্ধি তারও পরোক্ষ জবাব৷ আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন৷ ভোটের আগে সরকারি দফরতে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে তৃতীয় দফায় বিধিনিষেধ জারু করেছে রাজ্য৷ করোনা আবহে সরকারের আয় কমলেও পুরোহিত ভাতা ঘোষণা করে চলতি মাসেই চমক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ধর্মগুরুদের ভাতা দেওয়ার ঘোষণার পর পুজোর অনুদান একলাফে দ্বিগুণ করার ঘোষণা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷