এখানে দুর্গার বামে থাকেন গণেশ, কার্তিকের অবস্থান কলা বউয়ের পাশে, মেনুতে মাছ অপরিহার্য

এখানে দুর্গার বামে থাকেন গণেশ, কার্তিকের অবস্থান কলা বউয়ের পাশে, মেনুতে মাছ অপরিহার্য

 

হাওড়া: অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরের বিঝারি গ্রামে প্রায় আড়াই শতাব্দী আগে প্রথম দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছিলেন ঘটক পরিবারের পূর্বপুরুষেরা। সেখান থেকেই পরিবারের পুজোর শুরু। পান্ডবেশ্বর থেকে হিন্দুস্তান পার্ক হয়ে কলকাতার যাদবপুরের রামগড়ে আজও বংশ পরম্পরায় চলে আসছে সেই দুর্গা পুজো। এভাবেই টানা আড়াইশ বছরে কখনও ছেদ পড়েনি ঘটক পরিবারের পুজোয়।

এদের পুজোর আচার অনুষ্ঠান শাক্ত মতে হয়ে আসছে প্রথম থেকেই। এখনও সাবেক নিয়ম মেনে পুজোর তিনদিনই মহামায়ার পুজোয় বলি প্রথা চালু আছে এই পরিবারে। নিজের হাতে সেই বলিদান করেন পরিবারেরই কেউ। শুধু তাই নয় এই ঘটক পরিবারের পুজোয় অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মা দুর্গার বামে থাকেন গণেশ আর কার্তিকের অবস্থান কলা বউয়ের পাশে মায়ের ডান দিকে। এদের পরিবার বাংলাদেশের বিঝারিতে সংস্কৃত পণ্ডিত পরিবার  হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পরে এরা ঘটক উপাধিও পান। এই পরিবারের পূর্বপুরুষ বিধুভূষণ ছিলেন মা সারদার প্রত্যক্ষ শিষ্য।

বিঝারির গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন স্বয়ং মা সারদাদেবী। উদ্বোধন পত্রিকায় প্রকাশিত মা সারদার শিষ্যের তালিকায় তাঁর নামও রয়েছে। ১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে এরা অংশ নিয়েছিলেন। এরপর দেশভাগের সময় ১৯৪৭ সালে পরিবার চলে আসেন বাংলায়। সেই থেকে গত ৭৪ বছরে বিভিন্ন সময়ে এ বাংলার নানা জায়গায় কোথাও না কোথাও অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে পারিবারিক এই পুজো। গত বেশ কয়েক বছর ধরে রামগড়ে পরিবারের নিজস্ব ঠাকুরদালানে আড়ম্বরের সঙ্গে পুজো হয়ে আসছে।  বর্তমান প্রজন্মের পুজোর অন্যতম আয়োজক প্রসেনজিৎ ঘটক জানান, এবারও পুজোর ক’দিন দূর দূর থেকে এমন কি দেশের অন্য শহর ও বিদেশ থেকেও পরিবারের প্রবাসী সদস্যরা এসে হাজির হয়েছেন রামগড়ের বাড়িতে। তবে আগের বছরের মত এবারেও কোভিড বিধি মেনেই প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঘটক পরিবারের এই পুজোয় প্রতিদিনই দু’বেলা মা দুর্গাকে উৎসর্গ করা হয় আমিষ ভোগ। সেখানে মাছের নানা পদ অপরিহার্য। এমনই নানা বিশেষত্বে সাবেক পুজোর নানা বৈশিষ্ট ধরে রেখেছেন এরা। প্রসেনজিৎবাবু জানান, পরিবারের আড়াইশ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তাঁরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এক কালে এই পুজো শুরু করেছিলেন প্রপিতামহের প্রপিতামহ। সে সময়কার তালপাতার পুঁথি ও ভুর্জপত্র এবং তাল পাতাতেই লেখা চন্ডী আজও যত্নে রক্ষিত আছে এই বাড়িতে।

পুজোর ক’দিন বাড়ির যাবতীয় ভোগ রান্নার দায়িত্ব পরিবারের মেয়ে বউদের। বছর বছর একই শিল্পী পরিবারের সদস্যরা গড়ে আসছেন একচালা অপূর্ব গড়নের প্রতিমা। মেদিনীপুরের বেলদার নিকুশিনী গ্রামের পুরোহিত  বংশানুক্রমিকভাবে পালন করে আসছেন মায়ের পুজোর দায়িত্ব। এবারও তন্ত্র মতে শাক্ত আরাধনায় ঘটক বাড়ির দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য বজায় রাখার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × four =