স্কুল বাঁচাতে চপ শিল্পেই আস্থা প্রধান শিক্ষকের! লাভের টাকায় বেতন পাচ্ছেন শিক্ষকরা

স্কুল বাঁচাতে চপ শিল্পেই আস্থা প্রধান শিক্ষকের! লাভের টাকায় বেতন পাচ্ছেন শিক্ষকরা

a1425b97569633d13e0a8cc7699ced70

কলকাতা: স্কুলটাকে বড্ড ভালোবাসেন তিনি৷ মনে প্রাণে চান স্কুলটা আবার যেন প্রাণ ফিরে পায়৷ কিন্তু কী ভাবে বাঁচবে? অবশেষে স্কুল বাঁচাতে চপ শিল্পেই আস্থা রাখলেন প্রধান শিক্ষক৷ 

আরও পড়ুন- নববর্ষের আগে কালীঘাটে মমতা, সকলকে দিলেন ভালো থাকার বার্তা

ঝাড়গ্রাম শহরের বুকে রয়েছে একটি বেসরকারি নার্সারি স্কুল৷ লকডাউনের আগে পর্যন্ত ভালোই চলত পঠনপাঠন৷ কিন্তু কোভিডকালে পড়ুয়ার সংখ্যা একেবারে তলানিতে ঠেকে৷ যে ক’জন পড়ুয়া ছিল, তাদের অধিকাংশ অভিভাবকই ঠিক মতো বেতন দিতে পারেননি৷ এভাবে চলতে থাকলে কী ভাবে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের বেতন মেটানো হবে? আশঙ্কিত হয়ে পড়েন স্কুলের প্রধান শিক্ষক তিমির মল্লিক৷ ভার্চুয়াল ক্লাস শুরু করলেও সে ভাবে সাড়া মেলেনি৷ অর্থের অভাবে অধিকাংশ অভিভাবকই ছেলে-মেয়েকে স্মার্টফোন কিনে দিতে পারেননি৷ উপরন্তু অনলাইন ক্লাস করার জন্য শিক্ষিকাদের মোবাইল রিচার্জ করে দিতে হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে৷ 

অগত্যা স্কুল বাঁচাতে চপ শিল্পেই আস্থা রাখেন প্রধান শিক্ষক৷ চপ আর মিষ্টির দোকান খোলেন বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর বছর তিপান্নর তিমির৷ গত দেড় বছর ধরে বেশ ভালোই চলছে তাঁর দোকান৷ ওই দোকান থেকে যা উপার্জন হয় সেই টাকা দিয়েই ১৫ জন শিক্ষিকা ও ৬ জন শিক্ষাকর্মীকে বেতন দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক৷ 

১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বেসরকারি স্কুলটির দু’টি শাখা। একটি বাংলা মাধ্যম, অন্যটি ইংরেজি। করোনার আগে প্রি-নার্সারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত দুটি শাখা মিলে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে সাতশো। কিন্তু সবটাই বদলে দিল করোনা পরিস্থিতি। বাড়তে থাকে স্কুলছুটের সংখ্যা। যারা ছিল, তাদের বেতনও ছিল অনিয়মিত৷ তিমির বলেন, ‘‘হাতে যতটুকু মূলধন ছিল তা দিয়ে বড়জোর দু’মাস শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন মেটানো যেত। কিন্তু, তার পরে কী হবে চলবে? সেটা ভেবেই চপ-মিষ্টির দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিই।’’ শহরের উপকণ্ঠে ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া পঞ্চায়েতের পুরুষোত্তমপুরে তিন কাঠা জমি ছিল প্রধান শিক্ষক তিমিরের। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওই জমিতেই দোকান খোলেন তিনি৷  তাঁর সঙ্গে কাজে জুটে যান স্কুলের শিক্ষাকর্মী সন্দীপনারায়ণ দেব, অর্পণ নন্দ, কল্পনা সিংহ, শ্যামল দলুই, দুর্গা দে-রা 

স্কুলের নাম ‘স্পার্ক ২০২০’৷  কেন এমন নাম? তিমিরের কথায়, ‘‘করোনা আবহে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রমাণ হিসেবেই এই নামকরণ করা হয়েছে৷’’ তিনি মনে করনে, শুধু চপশিল্প নয়, নিষ্ঠাভরে যে কোনও কাজেই সাফল্য ধরা দেয়৷