কলকাতা: বাংলায় করোনা চিকিৎসার পদ্ধতি তৈরি হয়েছে চরম বিভ্রান্তি৷ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানে ৩টি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিভ্রান্তি কাটানোর চেষ্টা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের৷ সোমবার জোড়া বিজ্ঞপ্তির পর মঙ্গলবার সকাল-সকাল নতুন নির্দেশিকা জারি করে রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী বাড়িতে করোনার চিকিৎসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
সোমবার রাতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়, করোনা পজিটিভ হলেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বাধ্যতামূলক৷ মঙ্গলবার সকালে নয়া নির্দেশিকায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের গাইডলাইন অনুযায়ী হালকা উপসর্গ কিংবা উপসর্গহীন হলেও হোম আইসোলেশনেও থেকে নেওয়া যেতে পারে চিকিৎসা৷ সোমবার বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাও একই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন৷ তবে, সোমবার রাতের বিজ্ঞপ্তিতে ‘কেন্দ্রের নির্দেশে বাড়িতে করোনার চিকিৎসার’ তথ্য আগে প্রকাশিত হয়নি৷
বাড়িতে করোনার চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক৷ কেন্দ্রের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কেউ করোনায় আক্রান্ত হলেই তাঁকে আর হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না৷ প্রয়োজনে তিনি বাড়িতে থেকেও চিকিৎসা নিতে পারবেন৷ সেক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে সর্বক্ষণ দেখভালের জন্য একজন ব্যক্তি নিয়োগ করতে হবে৷ বাড়িতে করোনার চিকিৎসা নিতে গেলেও মানতে হবে একগুচ্ছ বিধিনিষেধ৷ এমনকী, রোগীর দেখভালের দায়িত্বে থাকা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্যও নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক৷
সোমবার বিকালে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বলেন, ‘সরকারের পক্ষে তো সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা সম্ভব নয়। কেউ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করতে চাইলে করতে পারে৷ হোম কোয়ারেন্টাইনটা সবচেয়ে ভাল৷ লক্ষ লক্ষ মানুষকে কোয়ারেন্টাইন করা যায় না৷ সরকারেরও সীমাবদ্ধতা আছে৷’ তাঁর আরো সংযোজন, ‘যার থাকার জায়গা আছে, ঘর আছে, তার করোনা সংস্পর্শে এলেও নিজের বাড়িতেই আইসোলেটেড থাকতে পারেন৷ ঘরে থাকলে নিজের মতো ভাল থাকতে পারবেন৷ সারা পৃথিবীতে এমনটাই চলছে। জায়গা না থাকলে, একটা ঘরে ১০ জন থাকলে, তাদের জন্য সরকার ব্যবস্থা করবে। সবার জন্য করতে পারে না সরকার৷ বাড়িতে থাকলে কী কী মেনে চলা দরকার, তার একটা গাইডলাই দিয়ে দেবে সরকার৷’
সোমবার রাতে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জারি নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, করোনা রোগীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির বাড়িতে যদি জায়গা থাকলে, তাহলে তিনি উপযুক্ত সতর্কতা সহ বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারবেন৷ সেক্ষেত্রে কী কী করতে হবে, কী কী করা যাবে না, তাও নির্দেশিকা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নির্দিষ্ট করে দেবেন বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখা হবে৷ ওই নির্দেশিকায় শেষ অংশে স্পষ্ট করা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাঁদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসবে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই বিধি কার্যকর হবে না৷ করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা বাধ্যতামূলক বলেও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা ঘিরে তৈরি হয় বিতর্ক৷ আর সেই বিতর্ক কাটাতে মঙ্গলবার আরও এক দফায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করল স্বাস্থ্য দপ্তর৷