গ্রুপ-ডি কর্মী আজ ইঞ্জিনিয়র, বর্ধমানে যুবকের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত জেলাশাসক

গ্রুপ-ডি কর্মী আজ ইঞ্জিনিয়র, বর্ধমানে যুবকের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত জেলাশাসক

বর্ধমান: ঝুলিতে ছিল বি-টেক ডিগ্রি৷ চোখে ছিল অফুরন্ত স্বপ্ন৷ কিন্তু ফাইলবন্দিই থেকে গিয়েছিল উচ্চশিক্ষার সংশাপত্র৷ বহু চেষ্টা করেও চাকরি জোটাতে পারেননি৷ অবশেষে সংসারের হাল ধরতে জেলাশাসকের দফতরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পদে নিয়োগের পরীক্ষা দেন পূর্ব বর্ধমানের ছেলে গুপিন মার্ডি৷ পরীক্ষার উত্তীর্ণ হয়ে বছর খানেক আগে কাজে যোগও দেন তিনি৷ কিন্তু থেমে থাকেনি তাঁর স্বপ্ন পূরণের তাগিদ৷ কাজের ফাঁকেই চলতে থাকে প্রস্তুতি৷ সম্প্রতি রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়র পদে পরীক্ষা দেন তিনি৷ ওই পরীক্ষায় বাজিমাত করেই এবার উত্তর দিনাজপুর জেলায় কাজে যোগ দিতে চলেছেন বীরভূমের নলহাটি থানার আলমপুর গ্রামের ২৬ বছরের যুবক গুপিন মার্ডি।

গুপিনের এই সফলতার পিছনে কিন্তু অবদান রয়েছে জেলাশাসক বিজয় ভারতীরও৷ গুপিনের লক্ষ্যপূরণের পিছনে ছিল তাঁর অদম্য উৎসাহ৷ জেলাশাসক বলেন, ‘‘একদিন আমাকে খাবার দেওয়ার সময় গুপিনকে কিছুটা ইতস্তত করতে দেখি৷ ওর চোখের দিকে তাকানোর পরই মনটা ভিতরটা নাড়া দিয়ে যায়৷ ওকে আলাদা করে ডেকে এনে কথা বলি৷ তখনই জানতে পারি গুপিন বি-টেক পাশ৷ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরি না পেয়ে গ্রুপ-ডি পদে যোগ দিয়েছেন৷ আর লক্ষ্য পূরণের জন্য অপেক্ষা করছেন৷ এতদিনে তাঁর প্রত্যাশা পূরণ হল৷ ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দিতে চলেছেন তিনি৷ গুপিনের এই লড়াই, তাঁর ইচ্ছাশক্তির জোড় আর অধ্যাবসায় আমাদের কাছে শিক্ষণীয়৷’’

দিন কয়েক আগেই পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে চিঠি পাঠিয়ে তাঁকে জানানো হয়েছে ইন্টারভিউয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন গুপিন৷ এই খবর শোনার পরই জেলাশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান গুপিন৷ তিনি বলেন, ‘‘স্যারের নজরে আসার পরই আমার মধ্যে যে খামতিগুলো ছিল, তা কমতে শুরু করে৷ ইন্টারভিউ বোর্ডে কী ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে, কী ভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে, এই সমস্ত বিষয়ে স্যার আমাকে গাইড করেছেন৷ কাজের ফাঁক পেলেই পড়াশোনা করেছি৷ অনলাইন থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হলেও, সাহায্য করেছেন স্যার৷’’

বর্ধমানের ছেলে গুপিনের পড়াশোনা মুর্শিদাবাদে৷ ২০০৯ সালে ৭২ শতাংশ নম্বর নিয়ে আজিমগঞ্জের একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। সেখানকার হোস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করতেন৷ এর পর বীরভূমের রামপুরহাট জিতেন্দ্র বিদ্যাপীঠ স্কুল থেকে ৭০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। ওই বছরই জয়েন্ট এনট্রান্স দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে  ভর্তি হন৷ সিউড়ি থেকে ২০১৫ সালে ৮৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে বি টেক পাশ করেন গুপিন৷ এত ভালো রেজাল্টের পরেও দু’বছর কোনও চাকরি জোটেনি। কাজ না পেয়ে অবশেষে নিজেদের ছ’ বিঘা জমিতেই চাষ করতে শুরু করেছিলেন। 

২০১৭ সালে তাঁর বাবার মৃত্যুর পর ‘জনজাতি উন্নয়ন সংস্থা’র মাধ্যমে কলকাতায় চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ আসে। পরের বছরই  গ্রুপ-ডি পদের পরীক্ষায় বসেন৷ ২০১৯ সালের মে মাসে পূর্ব বর্ধমান জেলাশাসকের অফিসে কাজে যোগ দেন তিনি। একটা সময় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন গুপিন। পরিবারের মুখে আহার জোগাতে গ্রুপ-ডি পদের চাকরির জন্যই পরীক্ষায় বসেছিলেন। গুপিনের ভাই ম্যানুয়াল মার্ডি এমএসসি-র ছাত্র৷ তিনি বলেন,“সংসার চালাতে সেই সময় দাদার চাকরিটা খুব জরুরি ছিল।’’

গুপিনের এই সফলতায় বেজায় খুশি তাঁর সহকর্মীরা৷ আনন্দিত খোদ জেলাশাসক৷ কী ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছে গুপিন তার সাক্ষী থাকা এই সহকর্মীরা বলেন, কাজ না থাকলেই জেলাশাসকের ঘরের সামনে রাখা একটি সোফায় বসে বই নিয়ে বসে পড়তে বসে যেত গুপিন। তাঁর এই অধ্যাবসায় ও পরিশ্রম আজ সফল হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 5 =