মেদিনীপুর: আশাকর্মী, এক কথায় করোনা যোদ্ধা৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সারাদেশ এবং এ রাজ্যে মা এবং শিশুদের স্বাস্থ্য পরিষেবা ছাড়াও কোভিডের নানাv পরিষেবা দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন এনারা৷ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টাই নিজেদের স্বাস্থ্যের পরোয়া না করে কাজ করে চলেছেন এনারা৷ কিন্তু এনাদের স্বাস্থ্যের খোঁজ কতটা রাখছে রাজ্য সরকার৷ এনাদের বিপদে আপদে সরকার কতটা দায়িত্ব নিয়েছে?
বহু আশা কর্মী করোনায় আক্রান্ত। বেশ কিছু জন প্রাণও হারিয়েছেন। বহু আন্দোলনের পর অক্টোবর মাস থেকে ১০০০ টাকা বাড়িয়ে রাজ্য সরকার মাসে ৪৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া শুরু করেছে এনাদের। এর সাথে দেওয়া হয় ফরমেটের ভিত্তিতে সামান্য কিছু অর্থ। কিন্তু এই আশাকর্মীরাই যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন বা করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কাজ না করতে পারেন তাহলে সেই সামান্য অর্থ থেকেও কেটে নেওয়া হয় টাকা৷ এমনই ঘটনা ঘটেছে মেদিনীপুরের এক আশাকর্মীর সঙ্গে৷
সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিতে গিয়েই করোনা আক্রান্ত হয়ে শালবনী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অনিতা কর শর্মা নামে এই আশাকর্মী৷ সেসময় কাজ না করতে পারায় কেটে নেওয়া হয় তার টাকা৷ এরপর কাজে যোগ দেওয়ার পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন অনিতাদেবী৷ অস্ত্রোপচার হয় তার৷ চিকিত্সক পরামর্শ দেন একমাস বিশ্রাম নিতে হবে তাকে৷ পরামর্শ মতোই একমাস কাজে যেতে পারেননি তিনি৷ এরপরই নেমে আসে আর্থিক বিপর্যয়৷ অনিতা দেবী জানতে পারেন তার ফরমেটের টাকা সহ মাসের বেতনও কেটে নেওয়া হয়েছে৷ যা শুনে রীতিমত হতবাক হয়ে যান তিনি৷
চিকিত্সার জন্য মেলেনি আলাদা খরচ৷ এখন বিনা ওষুধেই দিন কাটাতে হচ্ছে অনিতাদেবীকে৷ কারণ ওষুধ কেনার টাকা নেই৷ দিনের-পর-দিন হাজার কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার পর অধিকাংশ আশা কর্মী আজ নিজেরাই অসুস্থ রোগীতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তাঁদের নিজেদের চিকিৎসা পাওয়ার কোনো অধিকার নেই। এর জন্য নেই কোনো ছুটি। আর অন্য কাজ তো দূরের কথা, চিকিৎসার কারণে ছুটি নিলেও কেটে নেওয়া হচ্ছে প্রাপ্য অর্থ।
এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ আশা কর্মী ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদিকা ইসমত আরা খাতুন আজ বিকেলকে জানান, ” এরকম আরও কিছু ঘটনা অতীতে ঘটেছে৷ এই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার স্বাস্থ্য ভবনে এনএইচএম ও রাজ্যপালের কাছে প্রতিবাদের চিঠি পাঠিয়েছি৷ আশাকর্মীরা অত্যন্ত কম বেতনে পরিশ্রম দিয়ে, মনের আবেগ দিয়ে ভীষণভাবে গুরুত্ব দিয়ে এই কাজগুলিকে দেখে এবং কাজগুলো করে৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার অনেক বড় বড় তকমা তাদেরকে দেওয়া সত্ত্বেও অদ্ভুতভাবে যখন কোনও আশাকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তারা টাকাটা কেটে নেওয়া হয়৷”