রাজ্যপালের তলব ‘এড়ালেন’ স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজিপি! রাজভবনে মুখ্যসচিব, চরম ক্ষুব্ধ ধনখড়!

রাজ্যপালের তলব ‘এড়ালেন’ স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজিপি! রাজভবনে মুখ্যসচিব, চরম ক্ষুব্ধ ধনখড়!

f3f70ed8f2653b6c5ed6c60cac2aabd5

কলকাতা: টিটাগড়ে বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লকে গুলি করে খুনের ঘটনার পর থেকে উত্তাল শিল্পাঞ্চল৷ চলছে বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ৷ আগুন জ্বালিয়ে চলছে বিজেপির পথ অবরোধ৷ বিজেপি নেতাকে খুনের ঘটনায় সরকারি পুলিশ ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন বারাকুরের বিজেপি সংসদ অর্জুন সিং৷ বিজেপি সাংসদের এহেন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে রাজ্য পুলিশ৷ গোটা ঘটনার তদন্ত চললেও রাজ্যপালের তবলে রাজভবনে গেলেন না স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজিপি! কিন্তু, পূর্ব নির্ধারিত সূচির বাইরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করলেন সদ্য নিয়ুক্ত মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য রাজ্যের পুলিশি ডিজিপি ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল৷ কিন্তু তাঁরা গরহাজির থাকায় নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷

আজ ১০টা ৪৫ নাগাদ মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনে যান৷ মুখ্যসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এটাই ছিল প্রথম রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ৷ প্রায় দু’ঘণ্টা তিনি ছিলেন রাজভবনে৷ সূত্রের খবর, বৈঠকে টিটাগড়ের প্রসঙ্গ ওঠে৷ গোটা ঘটনায় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাজ্যপাল৷ মুখ্যসচিবকে গোটা বিষয়টি জানায় তিনি৷ কেন হঠাৎ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হল, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাজ্যপাল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন রাজ্যপাল৷ গোটা বিষয়টি মুখ্যসচিব যেন রাজ্যপালের উদ্বেগের কথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেন, তাঁর আর্জিও জানান বলে রাজভবন সূত্রে খবর৷

রাজভবন সূত্রে খবর, রাজনৈতিক হিংসা বা হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ারও বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল৷ থানার অদূরে ভর সন্ধ্যায় কীভাবে বিএনপি নেতাকে খুন হল? তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল৷ অবিলম্বে রাজ্যে আইনের শাসন জারি করতে হবে বলেও জানিয়েছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান৷ আজ প্রায় দু’ঘণ্টা পর ১টা ১৫ নাগাদ রাজভবন ছাড়েন মুখ্যসচিব৷ রাজভবন সূত্রে খবর, আজ মুখ্যসচিবের আসার কথা ছিল না৷ বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল স্বরাষ্ট্র সচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজিপির৷ কিন্তু, রাজ্যপাল টুইটারে জানিয়েছেন, ডিজিপি ও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আসছেন বলে জানান৷ গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি ফোন করলেও তার কোনও জবাব পাননি বলেও দাবি রাজ্যপালের৷ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজিপি রাজভবনে না আসায় টুইটে উষ্মা প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল৷

 

 

 

 

অন্যদিকে বিজেপির অভিযোগ, ঘটনাস্থল থেকে ঢিক ছোঁড়া দূরে একটি ওষুধের দোকানে থাকা ৪টি সিসিটিভি ক্যামার মধ্যে ১টি আচমকা উধাও হয়ে গিয়েছে৷ বিজেপি অভিযোগ তুললেও ওই ওষুধের দোকান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছে পুলিশ৷ গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ৷ পাল্টা পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি সাংসদ৷ এরপর আজ সকালে নাম না করে রাজ্য পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘তদন্তের আগে কোনও সিদ্ধান্তে আসবেন না৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করবেন না৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মন্তব্য তদন্তে হস্তক্ষেপের নামান্তর৷ এই ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন৷’’ পরে রাজ্যপুলিশের তরফে টুইটে আরও লেখা হয়েছে, ‘‘টিটাগড়ে খুনের নেপথ্যে থাকতে পারে ব্যক্তিগত শত্রুতা৷ খতিয়ে দেখা হচ্ছে খুনের সম্ভাব্য আরও কারণ৷’’

 

 

রবিবার ভরসন্ধ্যায় দু’টি বাইকে মণীশ শুক্লর উপর হামলা চালায় ৪ দুষ্কৃতী৷ বিজেপি নেতাকে গুলি করে চম্পট দেয় অভিযুক্তরা৷ গুলিতে গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন ওই বিজেপি নেতা৷ পরে হাতপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়৷ ঘটনার অদূরে থাকা ওষুধের দোকানে থাকা ৪টি সিসিটির মধ্যে এক সিসিটিভি উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন তুলছে বিজেপি৷ ঘটনার নয় মণীশ শুক্লর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটি থাকার খবর দুষ্কৃতীদের কাছে ছিল বলে আশঙ্কা স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের৷ কীভাবে খুন, পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও শাসকদল ও পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন অর্জুন সিং৷

টিটাগড়ে বিজেপি নেতা খুনের ঘটনায় বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের মন্তব্য, ‘‘‌গোটা ঘটনায় পুলিশ ও তৃণমূলে যৌথ অপারেশন চালিয়েছে৷ আমার কাছে খবর আছে, দুই চেয়ারম্যান উত্তম দাস ও প্রশান্ত চৌধুরী এবং রাজেন্দ্র চৌধুরী ও রাজেন্দ্র যাদব পুলিশের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেন৷ কারণ, যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে তা পুলিশই ব্যবহার করে৷ খুব সম্ভাবনা রয়েছে, লাটবাগান থেকে অস্ত্র বেরিয়ে পরে সেই অস্ত্র ফিরে গিয়েছে লাটবাগানে৷’’

আজ সকালে নিহত মণীশ শুক্লর বাড়িতে যান বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় ও বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং৷ ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় থেকে অরবিন্দ মেনন৷ মণীশ শুক্লর খুনের নেপথ্যে তৃণমূল ও পুলিশ যৌথভাবে ‘অপারেশন’ রয়েছে বলে অভিযোগ অর্জুন সিংয়ের৷ আজ পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর সরসরি এনআরএস হাসপাতালে পৌঁছে যান অরবিন্দ মেনন৷ সেখানে তাঁকে আটকে দেওয়া হয়৷ সেখানেই চলছে মৃত বিজেপি নেতার ময়নাতদন্ত৷

টিটাগড়ে বিজেপি নেতার খুনের ঘটনায় সবর হয়েছেন রাজ্যপাল৷ রবিবার রাত ১০টা ৪৭ মিনিটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্রুত কথা বলতে চেয়ে তিনি বার্তাও পাঠিয়েছেন বলেও দাবি করেন রাজ্যপাল৷ কিন্তু সে ব্যাপারও কোনও সদুত্তর পাননি বলেও টুইটারে অভিযোগ করেন রাজ্যপাল৷ টুইটের শেষে তিনি লিখেছেন, এই নিস্তবদ্ধতাই অনেক কিছু বলে যায়৷ আজ স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে রাজভবনে বৈঠকে বসেছেন রাজ্যপাল৷ বৈঠকের আগে বাংলায় আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রসঙ্গ তুলে উষ্মা প্রকাশ করেন রাজ্যপাল৷

রাজনৈতিক হিংসার বিরুদ্ধেও তোলেন অভিযোগ৷ বিজেপি নেতা খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়৷ এতদিনের সঙ্গীর মৃত্যুতে শোকার্তও প্রকাশ করেছেন অর্জুন সিং৷ তাঁর দাবি, ‘‌মণীশ আধ ঘণ্টা আগে অবধি আমার সঙ্গে ছিল৷ আমরা বাউড়িয়া থেকে বৈঠক সেরে ফিরছিলাম৷আমি কৈলাস বিজয়বর্গীয় সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে রওনা হই, আর ও চা খেতে চলে আসে টিটাগড়ে পার্টি অফিসের সামনে৷ আমরা যদি দু’‌জনে সঙ্গে থাকতাম তবে হয়তো বেঁচে যেত বা আমরা দু’‌জনেই মরে যেতাম৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *