কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্টের বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে ছাত্র বিক্ষোভের মুখে পড়লেন অচার্য তথা রাজ্যপাল রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর৷ আমন্ত্রণ ছাড়াই আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্টে বৈঠকে অংশ নিয়ে যাদবপুরে যান আচার্য৷ রাজ্যপালের কনভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’নম্বর গেটে পৌঁছানো মাত্র পড়ুয়ারা আচার্যকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন পড়ুয়ারা৷ ক্যাম্পাসের মধ্যেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন রাজ্যপাল৷ ঘণ্টা দেড়েক বিক্ষোভ চলার পর আচার্যকে বয়কট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপালকে প্রবেশের ‘অনুমতি’ বিক্ষুব্ধ পড়ুয়াদের৷
রাজ্যপাল ক্যাম্পাসে ঢোকার মাত্রই বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যপাল৷ ক্যাম্পাসের গেটের সামনেই আচার্যর গাড়ির সামনে কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের৷ রাজ্যপালকে বয়কটের সিদ্ধান্ত৷ কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের৷ রাজ্যপাল নিরপেক্ষ নন, তিনি রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে৷ এই অভিযোগ তুলে রাজ্যপালের গাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন পড়ুয়ারা৷ কালো পতাকা দেখিয়ে, গো ব্যাক স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা৷ বিক্ষোভের জেরে অরবিন্দ ভবনে ঢুকতে না পেরে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যান রাজ্যপাল তথা অচার্য৷ পরে এক নম্বর গেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন রাজ্যপাল৷ সেখানেও তাঁকে ঘিরে চলতে থাকে বিক্ষোভ৷ পরে পড়ুয়ারা সিদ্ধান্ত নেন, আচার্য হিসাবে রাজ্যপাল কোর্টের বৈঠকে অংশ নিতেই পারেন৷ কিন্তু, পড়ুয়ারা আচার্যকে বয়কট করবেন৷ রাজ্যপালকে বয়কট করার ঘোষণার পর রাজ্যপালকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের ‘অনুমতি’ দেন বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা৷ নিরাপত্তা আধিকারিকদের হাত ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকেন অবরুদ্ধ হয়ে থাকা রাজ্যপাল৷ শুরু হয়েছে কোর্টের বৈঠক৷
আচার্য তথা রাজ্যপালকে এড়িয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠান! আচার্য ছাড়া সমাবর্তন বেআইনি৷ সোমবার কোর্টের বৈঠকের আগে উপাচার্যকে চিঠি পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তরকে চ্যালেঞ্জা জানালেন খোদ রাজ্যপাল৷ কোর্টের বৈঠকে রাজ্যপাল অংশ নেবেন বলেও সাফ জানানো হয়েছে৷ সেই মর্মে আজ বৈঠকে অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান রাজ্যপাল৷ সেখানে বিক্ষোভের মুখে পড়েন আচার্য তথা রাজ্যপাল৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রবিবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে চিঠি পাঠান রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান৷ চিঠিতে অচার্য সাফ জানিয়েছেন, সমাবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বেআইনি৷ আচার্যকে এড়িয়ে কোর্টের বৈঠক ও সমাবর্তন হতে পারে না৷ তা নিয়ে আচার্য হিসাবে উপার্যকে চিঠি রাজভবনের৷
জানান, আজ দুপুর দুটোয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে বৈঠক ডেকেছে সেই কোর্ট বৈঠকে পুরোহিত্য করবেন রাজ্যপাল৷ রাজ্যপাল চিঠিতে লিখেছেন, সমাবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ও বেআইনি৷ ফলে, তিনি চানেছিলেন, আজ সোমবার কর্মসমিতির ডাকা বৈঠকে তিনি অংশ নিয়ে গোটা বিষয়টি পরিচালনা করবেন৷ কিন্তু, ছাত্র বিক্ষোভের জেরে ফিরে যেতে বাধ্য হন রাজ্যপাল৷
সমাবর্তন ইস্যুতে তিনি যে উদ্বিগ্ন, তা রবিবার টুইট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রাজ্যপাল৷ সাফ জানিয়েছিলেন, আচার্য ও উপাচার্যর যোগাযোগ থাকে সচিবালয়ের মাধ্যমে৷ কিন্তু সেখানে বাধা তৈরি হয়েছে৷ আচার্যের সঙ্গে কোনও কথোপকথন হচ্ছে না৷ এটা অসংবিধানিক৷ রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যত জরুরি অবস্থা তৈরি হয়েছে৷ আচার্যের অনুমতি না নিয়ে কী করে এমন সিদ্ধান্ত নিল কর্মসমিতি? এটা হতে পারে না৷’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠান স্থগিত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শনিবার সংবাদমাধ্যমে নিজের অবস্থান নির্দিষ্ট করেন রাজ্যপাল৷ জানান, আচার্যের অনুমতি না নিয়ে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কর্মসমিতি৷ রাজনৈতিক চাপেই উপাচার্য এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন রাজ্যপাল৷
কিন্তু, হঠাৎ কী নিয়ে এত সমস্যা? জানা গিয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’ধরণের সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়৷ স্পেশ্যাল সমাবর্তন ও বার্ষিক সমাবর্তন৷ বিশেষ সমাবর্তনে দেওয়া হয় ডি’লিট থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি৷ ডিগ্রি প্রাপকদের হাতে শংসাপত্র তুলে দিয়ে থাকেন আচার্য৷ পড়ুয়াদের শংসাপত্র দেওয়া হয় বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে৷ আগামী মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান রয়েছে৷ কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়, পড়ুয়াদের আপত্তির কারণে আচার্যকে এড়িয়ে সমার্তন করা হবে৷ এই মর্মে রাজভবনে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়৷ এরপরই রবিবার পাল্টা চিঠি দিয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন আচার্য৷