কলকাতা: আরও তীব্র রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো চিঠির পংক্তি ধরে ধরে এবার পাল্টা জবাব পাঠালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর৷ ৪ পাতার চিঠি পাঠিয়ে করোনা মোকাবিলা থেকে শুরু করে রেশন সমস্যা নিয়ে একগুচ্ছ গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান৷
মুখ্যমন্ত্রীর জবাবি চিঠির পাল্টা চারপাতা চিঠি পাঠালেন রাজ্যপাল৷ করোনা মোকাবিলা থেকে রেশন সমস্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি ধরিয়ে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘সংবিধানকে অপব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একই সঙ্গে সরকার ও সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন৷ রাজ্যে পুলিশের শাসন কায়েম হয়েছে৷ সমালোচনা করলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে৷ রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকারকে কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে৷ রাজ্যপাল মনোনীত বলে তার দায়িত্ব নিয়ে এই ধারণা বিলাপ মাত্র৷ আমি সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই কথা বলি৷ এখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত৷ কিন্তু আপনার আচরণে মনে হচ্ছে আপনি গুরুদেবের আদর্শচ্যুত৷ মানুষ জানে আমি বারবার আপনার সঙ্গে আলোচনায় জন্য সময় চেয়েছি৷ আবারও আবেদন করছি, আলোচনায় বসুন৷ সংবিধান অনুযায়ী আমি পদক্ষেপ করব৷’
গত ২ মে রাজ্যপালের জোড়া চিঠির জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাজ্যপালের ২০টি অভিযোগ উদ্ধৃত করে কড়া জবাব দেন মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, রাজ্যপালের ভাষা অপমানজনক নজিরবিহীন৷ স্বাধীন ভারতে কোন রাজ্যপাল এমনটা কখনও করেনি৷ দেশের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা৷ মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি নিম্নমানের ভাষা প্রয়োগের নজির নেই৷ সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায় উল্লেখ করে রাজ্যপালকে পত্রাঘাত করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাজ্যপালের সীমাবদ্ধতার কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সরকারের কাজ সহমত নাহলে আমাকে জানান৷ মন্ত্রী-আধিকারিকদের চিঠি দিয়ে প্রকাশ্যে আনছেন কেন? রাজ্যপালের জোড়া চিঠির উত্তর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গণতন্ত্রে সমস্ত ক্ষমতার উৎস সাধারণ মানুষ৷ সব জনপ্রতিনিধির দায়বদ্ধতা ও একাধিক কাজ থাকে৷ যার সঙ্গে মনোনীত সদস্যদের কোনও মিল নেই৷ নিয়মিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার তৈরি হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে৷ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্রধান৷ রাজ্যপালের প্রশাসনিক ভূমিকা পালনের চেষ্টা অভিপ্রেত নয়৷ এভাবেই চিঠিতে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, আপনি আমার কিংবা সরকারের কোনও কাজে সঙ্গে সম্মত না হতে পারেন৷ সে ক্ষেত্রে বিষয়গুলি আমার কাছে তুলে ধরতে পারেন৷ কিন্তু তারপরও যদি আপনি সন্তুষ্ট না হন, দুর্ভাগ্যবশত আপনার হাতে আর কোনও ক্ষমতা নেই৷ যতক্ষণ সরকারের উপর আইনসভা ভরসা রয়েছে, সত্য সবসময় তেতো হয়, এটাই সাংবিধানিক বাস্তবতা৷ আপনি যদি এটা মেনে নিতে না পারেন, তাহলে আপনার উচিত আমার চেয়ারে বসা৷ আমি নিশ্চিত এই চিঠির জবাব আপনি দেবেন৷ কিন্তু আমার জবাব না দেওয়ার অধিকার আছে৷ কারণ দেশের অন্যতম বড় রাজ্যের প্রধান হিসাবে, এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আমার৷
ওই দিন পাল্টা রাজ্যপাল টুইটারে লেখন, মুখ্যমন্ত্রীর লেখা চিঠির জবাব পেয়েছি৷ করোনা পরিস্থিতির উপর মনোনিবেশ করুন মুখ্যমন্ত্রী৷ মানুষের যন্ত্রণা মোকাবিলায় সবাইকে নিয়ে কাজ করুন৷ মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় কোনও সারবত্তা পায়নি৷ বাস্তব ও আইনি দিক থেকে কোনরকম সারবত্তা পায়নি৷ সহযোগিতার বিষয়টি প্রশংসা করছে৷ একযোগে কাজ করার জন্য অনুরোধ করছি৷ আমরা এখন আকাশ ভেঙে পড়ার মুখোমুখি৷ আশা করি, সবাই ভূমিকা পালন করবেন৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে নয়, আমি অনেক কিছু বুকে চেপে রেখেছি৷ কিন্তু মনে হচ্ছে, এখন তা বের না করলে উপায় নেই৷ মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির জবাব দেওয়া হবে৷ পাল্টা টুইট করেন রাজ্যপাল৷ এরপর আজ ফের চিঠি রাজ্যপালের৷
My response @MamataOfficial “Let us, in deference to popular sentiment, give quietus to this and together subscribe to time tested pearls of wisdom and plunge in service of the people, discarding the baggage of past and just look ahead to beat Covid-19 (1/3) pic.twitter.com/rjOxhdu1GE
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) May 4, 2020