কলকাতা: গত দু’দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে একটি ভয়ঙ্কর ভিডিয়ো৷ ওই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হচ্ছে মৃতদেহ। পচাগলা দেহগুলির গলায় আঁকশি গেঁথে এক এক করে টেনে তোলা হচ্ছে শ্মশানের গাড়িতে। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধানকর৷ শুক্রবার টুইট করে তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনা হৃদয়হীন, অবর্ণনীয়, সংবেদনহীন৷’’ প্রশাসনকে এই ঘটনার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
রাজ্যপাল আরও লেখেন, ‘‘মর্মাহত, ভিডিয়োতে মৃতদেহ টেনে নিয়ে যাওয়ার হৃদয়বিদারক নির্মম দৃশ্য দেখে জনমানসে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, তাতে আমি উদ্বিগ্ন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাজে আমি স্তম্ভিত। কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান এবং পুরসভা কমিশনারের কাছে আজ এ ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছি।’’
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার গড়িয়া শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়৷ স্থানীয়দের দাবি ছিল, এই দেহগুলি করোনা রোগীদের৷ যদিও তাঁদের এই দাবি মানতে নারাজ হাসপাতাল কৰ্তৃপক্ষ৷ তাঁরা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, বিজেপি-র দাবি, দেহগুলি করোনা আক্রান্তদেরই৷
অন্যদিকে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এগুলি অজ্ঞাতপরিচয় ও বেওয়ারিশ লাশ। মৃতদেহগুলি করোনা আক্রান্তদের নয়৷ এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের মর্গে ১৪টি দাবিদারহীন মৃতদেহ পড়েছিল। নিয়ম মাফিক ১৫ দিন পর সেগুলি সৎকারের জন্য পাঠানো হয়েছে। ফেকনিউজ বা ভুয়ো খবর ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও টুইট করে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ৷ ভিডিয়ো-টি ভুয়ো বলে দাবি জানিয়েছে এনআরএস কর্তৃপক্ষও৷ মৃতদেহ নিয়ে পুরসভার গাড়ি দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া আদি মহাশ্মশানে পৌঁছনোর পরই বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ এই বিক্ষোভের মুখে মৃতদেহ সৎকার না করেই ফিরতে হয় তাদের৷
এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরাদ হাকিম বলেন, এর আগে ধাপায় বেওয়ারিশ দেহগুলির সৎকার করা হত৷ কিন্তু ধাপা ময়দান করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হওয়ায় দেহগুলি গড়িয়া মহাশশ্মানে নিয়ে যাওয়ার হয়েছিল৷ তবে স্থানীয়দের বিক্ষোভের পর মৃতদেহগুলি সেখান থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ এদিন রাজ্যপাল বলেন, ‘‘এই দেহগুলি করোনা আক্রান্তদের ছিল কিনা, তা তদন্তসাপেক্ষ৷ কিন্তু মূল বিষয় হল, কতটা নির্মমভাবে মৃতদেহগুলি টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ পশুদের চেয়েও খারাপ আচরণ করা হয়েছে মৃতদেহগুলির সঙ্গে৷ যাঁরা বিষয়টি থেকে নজর ঘোরাতে চাইছেন, তাঁরা একবার ভেবে দেখুন মৃতদেহগুলি যদি আপনাদের পরিচিত কারও হত!’’
পরে রাজ্যপাল লেখেন, ‘‘রাজ্যকে কোনও ভাবেই পুলিশ-পরিচালিত রাজ্যে পরিণত হতে দেওয়া যায় না।সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় নাগরিকের অর্জিত মানবিক অধিকার হরণ এবং দমনমূলক পদক্ষেপও চলতে দেওয়া যায় না৷ (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করে) বিস্তারিত জানতে চাইব এবং চূড়ান্ত পর্বে বিষয়টি নিয়ে যাব৷ সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ বা সংশ্লিষ্ট মানুষদের পুলিশ দিয়ে ভয় দেখানোর দিন শেষ৷ এসব আর বরদাস্ত করা হবে না৷ (রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ট্যাগ করে) জবাব এসেছে৷ মৃতদেহ সৎকারে অব্যবস্থা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে ভবিষ্যতে নিয়ম-পদ্ধতি পালনের কথা বলা হয়েছে৷ এমন অমানবিক অপরাধ যাঁরা করেছেন, তাঁদের ছেড়ে পুলিশ লেলিয়ে যাঁরা এমন ঘটনা সামনে এনেছেন তাঁদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে৷’’
যদিও ভাইরাল ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি আজ বিকেল ডট কম৷