বাঁকুড়া: ১০ কোটি টাকা প্রতারণার দায়ে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে চারদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত৷ রবিবার অভিযুক্ত এই হেভিওয়েট নেতাকে পুলিশ বিষ্ণুপুর আদালতে তোলে। সেখানে এই নির্দেশ দেন বিচারক৷
এদিকে এদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে গিয়ে বারেবারে মেজাজ হারাতে দেখা গিয়েছে শ্যামাপ্রসাদকে৷ আপনি কোন দলে আছেন, এই প্রশ্নের জবাবে কখনও বলেছেন, আপনারা আমাকে যেখানে রাখবেন, আমি সেই দলে৷’’ কখনও বা ক্ষ্রিপভাবে বলেছেন, ‘‘বলব না৷’’ কি কারণে পুলিশি গ্রেফতারের বিষয়ে প্রাক্তন বস্ত্রমন্ত্রীর দাবি, ‘‘জানি না কি কারণে আমাকে গ্রেফতার করল৷’’ তাহলে রাতভর থানায় আটকে রাখা হল যে! এবার দৃশ্যতই মেজাজ হারান শ্যাম, ‘‘আমি রেপ করেছি নাকি!’’
সরকারি আইনজীবী ইন্দ্রনারায়ণ বিশ্বাস জানান, প্রায় দশ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে (টেন্ডার কেলেঙ্কারি) রাজ্যের প্রাক্তন বস্ত্র মন্ত্রী তথা বিজেপির বিষ্ণপুরের দাপুটে নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে পুলিশষ শনিবার গভীর রাতে বিষ্ণুপুরের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই হেভিওয়েট এই নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তাঁকে চারদিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক৷ আসামীপক্ষের আইনজীবী গৌরীপ্রসাদ বিশ্বাস অবশ্য জামিন মঞ্জুরের দাবি জানিয়েছিলেন৷ বিচারক তা খারিজ করে দেন৷
প্রায় তিন দশকেরও বেশী সময় বিষ্ণুপুর পুরসভার পুরপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ দীর্ঘদিন কংগ্রেসি ঘরোনার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শ্যামাপ্রসাদ তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলে ছিলেন৷ বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি ২০১১ সালে রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদেও ছিলেন তিনি৷ বরাবরই তাঁর বিরুদ্ধে গোষ্ঠী রাজনীতি করার অভিযোগ এনেছিলেন নিচুতলার কর্মীরা৷ যদিও একসময়, মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় তালিকায় থাকার দৌলতে শ্যামাপ্রসাদের বিরুদ্ধে বিশেষ কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি বলে দলীয় সূত্রের খবর৷
একুশের বঙ্গ ভোটের ঠিক আগে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে একই দিনে মেদিনীপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভায় গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। যদিও পরে এই দলের সঙ্গেও তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এক সময় ‘বিষ্ণুপুরের অলিখিত ‘বাদশা’ শ্যামাপ্রসাদ গ্রেফতারির খবর সামনে আসতেই শহর জুড়ে ছড়িয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য। পুলিশ সূত্রের খবর, পুরসভার টেন্ডার সহ একাধিক বেনিয়মে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে প্রাক্তন এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে৷