নিজস্ব প্রতিনিধি, ক্যানিং: সুন্দরবনের আমফান পীড়িত এলাকা পরিদর্শন করলেন বনমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জী। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে সুন্দরবন একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। এই অঞ্চলের রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্যায়ণের জন্য সরকারি উদ্যোগে একাধিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছিল ইতিমধ্যেই। তবে গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আমফানের তান্ডবে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয় সুন্দরবন ও সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে। এরপর থেকেই ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি উন্নয়নে জোরদার পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতটাই যে এখনও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক করা যায়নি। সুন্দরবনের পরিবেশ সংরক্ষণে মুখ্যমন্ত্রী বার বার জোর দিয়েছেন ম্যানগ্রোভ রোপনের ওপর।
আমফানের পরেই এলাকা পরিদর্শনে গেছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জী। সোমবার আবারও সুন্দরবনের একাধিক এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। এদিন কলকাতা থেকে সড়কপথে গদখালি হয়ে সেখান থেকে লঞ্চে জলপথে গোসাবা ব্লকের প্রত্যন্ত কুমীরমারী গ্রামে পৌঁছে যান বনমন্ত্রী। সেখানে সরসা নদীর পাড়ে ১৩ হাজার ম্যানগ্রোভ চারা রোপণ করা হয় বনমন্ত্রীর উদ্যোগে। গ্রামের মহিলাদের তৈরী ম্যানগ্রোভের কিছু চারাগাছ নিজের হাতেই রোপণ করেন এবং তাঁদেরও ম্যানগ্রোভ চারাগাছ রোপণের জন্য উৎসাহিত করেন। এরপর বিকেলে কুমীরমারী থেকে তিনি সোজা চলে যান সুন্দরবনের বসিরহাট রেঞ্জের ঝিলা ফরেস্ট ক্যাম্পে। সেখানে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে এলাকার প্রায় ১০০ মৎস্যজীবীর হাতে গ্যাস ওভেন তুলে দেন তিনি। এমন আরও ৭২০ জন মৎস্যজীবীর হাতে গ্যাস ওভেন তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ওই সংস্থার। পাশাপাশি এলাকার দুঃস্থ মৎস্যজীবী পরিবারের ১০০০ছেলে মেয়েদের হাতে শিক্ষাসামগ্রী তুলে দেন। আম্ফান বিধ্বস্ত সুন্দরবনের শতাধিক মৎস্যজীবীকে মাছ চাষে সহায়তার জন্য তিন কেজি করে মাছের পোনা তুলে দেন তাঁদের হাতে। ঝিলা জঙ্গল এলাকার একটি মিষ্টি জলের পুকুরে নিজেই এক হাঁড়ি মাছের পোনা ছাড়েন বনমন্ত্রী। পাশাপাশি এলাকার আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গেও কথা বলেন।
এই অনুষ্ঠানে বনমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা,সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানে সুন্দরবনের প্রবেশ দ্বার ক্যানিংয়ের উন্নতিকল্পে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতের প্রচীন শহর তথা প্রবেশ দ্বারও ক্যানিং। দেশী বিদেশী পর্যটকরা এই ক্যানিং শহর হয়েই সুন্দরবনে যায়। তাই ক্যানিং শহরের এসডিও রোডে একটি উন্নত মানের গেট তৈরি করা হবে। পাশাপাশি পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে ক্যানিং শহরকে ঢেলে সজানো হবে। তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আম্ফান পরবর্তী সময়ে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ রোপণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে ২ কোটি মানগ্রোভ চারাগাছ সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে রোপণ করার কাজ শেষ হয়েছে।আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরো ৩ কোটি ম্যানগ্রোভ চারাগাছ রোপণের কাজ শেষ হবে।