লটারির লিখনে দিন বদল মৎস্যজীবীর! কোটিপতি সুভাষ চান ৪ সন্তানের শিক্ষা!

লটারির লিখনে দিন বদল মৎস্যজীবীর! কোটিপতি সুভাষ চান ৪ সন্তানের শিক্ষা!

নিজস্ব প্রতিনিধি, ক্যানিং : সুন্দরবন অঞ্চলের বাসন্তীর চড়াবিদ্যা অঞ্চলের সাত নম্বর কুমড়োখালি গ্রামে সুভাষ দলুইয়ের বাড়ির সামনে প্রতিবেশীদের ভিড়। উৎসুক, উত্তেজনা নিয়ে মানুষটির বাড়ির সামনে সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে এলাকার সবাইর আনাগোনা শুরু হয়েছে। কারণ, নদীতে কাঁকড়া ধরে জীবীকা নির্বাহ করা এই সুভাষ দলুই এখন কোটিপতি। শখের লটারির টিকিট বদলে দিয়েছে দিন। দুঃখের দিন ঘুচে গিয়েছে সুভাষ দলুইয়ের।

সুন্দরীর সৌন্দর্যে ভরা সুন্দরবনের আশপাশের গ্রামগুলিতে গেলে বা এলাকার লোকজনদের সঙ্গে কথা বললে, তাঁদের মুখে শোনা যায়, সেখানে নাকি জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ। বাসন্দী, হিঙ্গলগঞ্জের মতো এলাকাগুলিতে প্রায় বাঘের হাতে মৎ্স্যজীবী বা মধু আরোহণকারীদের প্রাণহানীর খবর শোনা যায়। তবুও পেটের দায়ে প্রতিদিনই জীবন বাজি রেখে বেরিয়ে পড়তে হয় কাঁকড়া, মাছ অথবা মধু আরোহনে। তেমনভাবেই দিন কাটছিল সুভাষ দলুইয়ের৷ বিদ্যাধরী নদীর চড়ে কাঁকড়া ধরে, তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে কোনওমতে দিন গুজরান হয় তাঁর৷ তবে তারমধ্যেই জীবন জীবীকা বাদ দিয়েও লটারির টিকিট কাটার শখ ছিল সুভাষ দলুইয়ের। আর তা থেকেই অনটন ঘুচল সংসারে৷ ১ ডিসেম্বর একটি সংস্থার টিকিট কাটেন সুভাষ দলুই৷ বুধবার খেলার ফলাফল প্রকাশ হতেই প্রথম পুরস্কারজয়ীর তালিকায় উঠে আসে তাঁর নাম। দিন আনা, দিন খাওয়া পরিবারের কাছে কোটি টাকা স্বপ্নের মতো। তবুও কোনও এক দৈবশক্তির বলে স্বপ্ন আজ হাতের মুঠোয়৷ খুশিতে ভাসছেন দলুই পরিবারের সদস্যরা। আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশী, সবাই খুশি এই প্রাপ্তিতে।

লটারিতে জেতা টাকা যাতে দ্রুত হাতে পান সুভাষ দলুই, তার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রতিবেশিরা। শম্ভু নাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘করোনা এবং লকডাউনের দুরবস্থা থেকে এরকম একটা একটা খবর, এই পরিবারের জন্য এবং আমাদের গ্রামবাসী, পাড়া প্রতিবেশী, সবার জন্য খুশির সংবাদ। আমরা এতে ভীষণ খুশি৷’’ প্রথম পুরস্কারজয়ী সুভাষ দলুই জানান, ‘‘আমার তিন মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে। তাদের ভাল করে লেখাপড়া শেখাতে চাই৷’’ ঈশ্বরী পাটনীকে বর দিতে চেয়েছিলেন সওয়ারিরূপী দেবী অন্নপূর্ণা। তবে তিনি চেয়েছিলেন সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে৷ গরীব, দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের কাছএ সন্তানদের দুবেলা পেট ভরে খাবারের ব্যবস্থা করাই অন্যতম সাফল্য৷ লটারিতে জেতা কোটি টাকা দিয়ে অন্যকিছু নয়, সন্তানদের ভাল করে লেখাপড়া শিখিয়ে সাবলম্বী করাই লক্ষ্য সুভাষ দলুই। এই লক্ষ্যেই এবার নতুন জীবন শুরু। দরিদ্রের সঙ্গে পরিবার পালন করে কোটি টাকার জেতার আনন্দ তো আছেই, তারসঙ্গেই রয়েছে ভবিষ্যত পরিকল্পনা। ঈশ্বরী পাটনীর মতোই তিনিও চান সন্তানদের দুধে ভাতে রাখতে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − 12 =