বারাকপুর: দীর্ঘ লকডাউনে বন্ধ হয়েছে কাজ-কারবার৷ পেট ভরাতে দু’মুঠো অন্ন জোগানো এখন বড় দায়৷ এমন পরিস্থিতিতে সংসারের হাল ধরতে বইয়ের পাতায় মুখ লুকনো মেধাবী ছাত্রকে বিক্রি করতে হচ্ছে ফুচকা৷
উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের শরৎপল্লির বাসিন্দা সন্দীপন দাস৷ শ্যামনগর কান্তিচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সে৷ সন্দীপন বরাবরই স্কুলে প্রথম হয়ে এসেছে৷ এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে সে৷ আপাতত রেজাল্ট বেরনোর অপেক্ষা৷ টেস্ট পরীক্ষাতেও প্রথম হয়েছিল সন্দাপন। তাঁকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন রয়েছে তাঁর পরিবারের৷ কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতা তাকে বাধ্য করল সংসারের হাল ধরতে৷ ফুচকা বিক্রি করেই উপার্জন করছে সে৷
সন্দীপনের বাবা সঞ্জয় দাস পেশায় অটো চালক৷ কিন্তু লকডাউনে এতদিন কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল৷ চার সদস্যের সংসারে রয়েছে সন্দীপের বাবা-মা আর এক যমজ বোন৷ বোন রণিতাও এবার তার সঙ্গেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে৷ দুই ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় সঞ্জয়বাবুকে৷ তার উপর কাজ বন্ধ হওয়ায় পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে ওঠেছে৷ সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘কোনওভাবে সংসার চালাই। কিন্তু লকডাউনের ফলে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে৷ প্রথমে ফুচকার প্যাকেট কিনে এনে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতাম। তারপর আমার স্ত্রী’ই বাড়িতে ফুচকা বানানো শুরু করে৷ এখন ছেলেটাও আমার সঙ্গে ফুচকা বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়ে।’’
সঞ্জয়বাবু একেবারেই চান না ছেলে ফুচকা বিক্রি করুক৷ এতে তার পড়াশোনার ক্ষতি হবে৷ কিন্তু অভাবের সংসারটাও তো চালাতে হবে৷ এই পরিস্থিতিতে সন্তানদের পড়াশোনা চালানো সত্যিই কষ্টকর৷ সঞ্জয়বাবু বলেন, দুই সন্তানের নতুন ক্লাসের বইপত্র কিনতে হবে। প্রাইভেট টিউটরদের বেতন দিতে হবে৷ সদ্য অটো চলতে শুরু করেছে৷ তবে এখনও ভালো করে যাত্রী হচ্ছে না৷ ফলে ফুচকা বিক্রি করতেই হচ্ছে৷
সন্দীপনের স্কুলের বাংলার শিক্ষক সুদীপ বসু বললেন, ‘‘সন্দীপন স্কুলের ফার্স্টবয়৷ টেস্টেও সন্দীপন ফার্স্ট হয়েছে। পড়াশোনার প্রতি ওর খুবই আগ্রহ। এমন একটা মেধাবী ছেলের যদি পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে।’’ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় সন্দীপনও৷ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরনোর পর আবার স্কুলে ভর্তি হতে চায় সে৷ কিন্তু পরিবারের অভাব-অনটন পিছুটান হয়ে উঠেছে৷ বোনের পড়াশোনা কী ভাবে চালাবে, সেই চিন্তাও রয়েছে তার৷ সন্দীপনের ইচ্ছা কোনও আইআইটি-তে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ার৷ বোন রণিতা চায় ডাক্তার হতে৷ কিন্তু তাঁদের এই স্বপ্ন কী ভাবে পূরণ হবে, সেই চিন্তাই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সন্দীপনকে৷