কলকাতা: কলকাতার ৩৯ তম মেয়র হিসাবে আজ শপথ গ্রহণ করলেন ফিরহাদ হাকিম৷ তিনি বরাবরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য৷ যে কোনও সমস্যা হলেই ডাক পড়ে ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ ববির৷ তাই শোভন চট্টোপাধ্যায় যখন মেয়রের আসন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তখন ববির হাতেই দায়িত্ব সঁপেছিলেন দলনেত্রী৷
আরও পড়ুন- কলকাতা পুরসভার মেয়র পদে শপথ নিলেন ফিরহাদ হাকিম
২০১৮ সালের নভেম্বর৷ প্রেমের জোয়ারে ভেসে পদ ছেড়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ মুখ্যমন্ত্রীর সাফ নির্দেশ ছিল, হয় পদ, নয় প্রেম৷ কলকাতার মেয়রের মতো সম্মানীয় পদ ছেড়ে প্রেমকেই বেছে নেন শোভন৷ যে আসন একদা অলঙ্কৃত করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু৷ সেই আসন পরকীয়ায় কালিমালিপ্ত করেন তিনি৷ সকলে এক যোগে তাঁকে ধিক্কার জানায়৷ এই সঙ্কটকালে মুখ্যমন্ত্রীর ক্রাইসিস ম্যানেজ করেন তাঁর বিশ্বস্ত ববি৷ মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বস্ত যোদ্ধা ববি হাকিম বরাবরই পার্টি লাইন ধরে হেঁটেছেন৷ অতিবড় সমালোচকেরাও তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার আগে দু’বার ভাবেন৷
১৯৫৯ সালে ১ জানুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ফিরহাদ হাকিম। তাঁর বাবা আবদুল হাকিম কলকাতা বন্দরের আইনজ্ঞ ছিলেন। তাঁর নাম ফিরহাদ হলেও, বহু মানুষ তাঁকে ববি হাকিম বলেই চেনেন। ববি তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন জাতীয় কংগ্রেস থেকে৷ সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কংগ্রেস নেত্রী৷ তাঁর হাত ধরেই রাজনৈতিক সফর শুরু হয় ফিরহাদের৷ বলতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁর রাজনৈতিক ‘গুরু’৷ ফিরহাদ নিজেও সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন৷
১৯৯০ সালে প্রথমবার কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন ফিরহাদ হাকিম। তখন তিনি কংগ্রেসের সদস্য৷ হাত প্রতীকেই পুরসভার ভোটে লড়েন এবং জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ পান৷ ২০০৯ সালে প্রথমবার বিধায়ক হয়ে পা রাখেন বিধানসভায়৷ সেবার আলিপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে কলকাতা বন্দর কেন্দ্র থেকে জিতে বিধায়ক ও মন্ত্রী হন ববি। এরপরে ২০১৬ সালে ওই কেন্দ্র থেকেই ফের বিধায়ক নির্বাচিত হন৷ ২০১৮ সালের শোভন চট্টোপাধ্যায় পদত্যাগ করার পর ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ ববির হাতেই লালবাড়ির দায়িত্ব তুলে দেন তৃণমূল সুপ্রমো৷ কলকাতা পুরসভার মেয়র পদে আসীন হন তিনি৷ ২০২০ সালে পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তাঁকেই পুর-প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ২০২১-এর পুরসভা ভোটে জয়ী হয়ে আরও একবার লালবাড়ির ‘প্রধান সেবক’ হলেন ববি৷
তবে ববি হাকিমের নামের সঙ্গে বিতর্কও ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে৷ নারদ কাণ্ডে সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে হয়েছে তাঁকে৷ সেই সময় কলকাতা লড়ছে কোভিডের সঙ্গে৷ চোখে জল নিয়ে তিনি বলে উঠেছিলেন, ‘‘কলকাতার মানুকে বাঁচাতে দিল না। করোনা পরিস্থিতি সামলানোর দায়িত্ব আমার উপরেই দেওয়া হয়েছিল।’’ সেই সময় তাঁর সেই চোখের জল বহু মানুষের মন ছুঁয়েছিল৷ দ্বিতীয়বার ফিরহাদ হাকিম মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় খুশি কলকাতাবাসী৷