গোবিন্দপুর: পোষ্যের প্রতি মমতা নতুন ঘটনা নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির কুকুর বা বিড়ালের প্রতি মানুষের টান থাকে আত্মীক। এমনই একটি ঘটনার নিদর্শন মিলল দক্ষিণ ২৪ পরগনার দক্ষিণ গোবিন্দপুরে। পোষ্য গোরুর প্রতি অসীম ভালোবাসার কাহিনী জীবন্ত হয়ে উঠল।
মাস খানেক আগে শখ করে একটি খাটাল থেকে একটি সাদা গরু কিনেছিলেন আখতার আলি মণ্ডল। তিনি পেশায় চাষি। বাছুর-সহ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছিলেন তিনি। বাড়িতেই থাকত সেই গরু ও বাছুর। তাদের ভালবাসতেন অত্যন্ত। খাওয়াতেনও নিজের হাতে। আদর করে তাঁর এই পোষ্যের নাম তিনি রেখেছিলেন ‘সাদা বুড়ি’। ওই নামেই ডাকতেন। কিন্তু ‘সাদা বুড়ি’র স্নান করানো নিয়ে মাঝে মধ্যেই কাজের লোকের সঙ্গে ঝামেলা হত আখতার সাহেবের। এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে শেষমেশ আদরের পোষ্যকে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এক আত্মীয়ের সাহায্যে খোঁজখবর চালান তিনি। অবশেষে ক্যানিংয়ের এক মাস্টার মশাইয়ের কাছে ৪০ হাজার টাকায় ‘সাদা বুড়ি’কে বিক্রি করে দেন তিনি। সেখানে গরু দেখাশোনার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানার পরই এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
কিন্তু ‘সাদা বুড়ি’কে বিক্রি করার পর থেকেই অবসাদে চলে গিয়েছিলেন তিনি। একটা শূন্যতা বোধ তৈরি হয়েছিল। কোনও কিছুতেই যেন মন বসছিল না। খাওয়া-দাওয়াও প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল। তাই কিছুদিনের মধ্যেই নিজের প্রিয় পোষ্যকে ফেরৎ আনতে উঠেপড়ে লাগেন তিনি। কিন্তু যাকে একবার বিক্রি করে দিয়েছেন তাঁকে ফেরৎ পেতে বেশ বেগ পেতে হয় তাঁকে। ক্যানিংয়ের এই মাস্টার মশাইয়ের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। কিন্তু তিনি গরু ফেরাতে নারাজ ছিলেন। অনেক অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। আখতার আলি জানিয়েছেন, একদিন তিনি তাঁর গরুকে দেখতে মাস্টার মশাইয়ের খাটালে গিয়েছিলেন। সেখানে গরুর হাল দেখে মন ভেঙে যায়। তখনই স্থির করে ফেলেন তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনবেন। শুরু হয় তাঁর নতুন লড়াই।
শেষ পর্যন্ত পুলিসের দ্বারস্থ হন আখতার আলি। প্রথমে তিনি বারুইপুর পুলিস জেলার স্পেশাল অপারেটিং গ্রুপের লক্ষীকান্ত বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর ক্যানিং থানায় খবর দেন। এরপর নরেন্দ্রপুর থানার আইসি সুখময় চক্রবর্তীকে বলেন গোটা ঘটনা। তাঁর তরফে বিষয়টি দেখার জন্য ক্যানিং থানায় নির্দেশ দেওয়া হয়। দুই থানার সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত গরুটিকে ফিরে পান আখতার আলি। এর জন্য অবশ্য কড়কড়ে ৫০ হাজার টাকা খসাতে হয় তাঁকে। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। ‘সাদা বুড়ি’কে ফিরে পেয়ে আপ্লুত আখতার আলি।