আজ বিকেল: জন্ম থেকেই অন্ধকার সঙ্গী, জগতের বর্ণময় রঙের কোনওটিই তার দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে তাতে কি, বই পড়েই নিজের ও পরিবারের মধ্যে রামধনুর আবির্ভাব ঘটাল শুভদীপ, দুর্গাপুরের শুভদীপ মণ্ডল। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ স্কুলের ছাত্র শুভদীপ মাধ্যমিকেল ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়েছে। গত বছর নরেদন্দ্রপুর ব্লাইন্ড বয়েজের এক ছাত্র ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল মাধ্যমিকে। এবারও সেই ধারা বজায় থাকায় খুশি শিক্ষকরা।
প্রতিবেশীদের মুখে নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড বয়েজ স্কুলের খবর পেয়েছিলেন দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের কর্মী আদিত্য মণ্ডল। তাই দৃষ্টিশক্তিহীন ছেলেকে সেখানেই ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করে য়ান। দেখতে না পাওয়ার দুঃখকে পড়াশোনার মধ্যে দিয়ে জয় করে নিয়েছিল শুভদীপ। ক্লাসের পরীক্ষায় প্রতিবারই ভাল ফল করত। মাধ্যমিকে সে দেখিয়ে দিল সেরা হওয়াটা শুধু অধ্যাবসায়ের ব্যাপার। শুভদীপ গান গাইতে খুব ভালবাসে। স্কুলের যাবতীয় অনুষ্ঠানে গান গাওয়া ছাড়া সিন্থেসাইজার বাজিয়ে সকলের মন জয় করেছে সে। শিল্পী মান্না দে-র গান তার খুব প্রিয়। পড়াশোনা শেষ করে গায়ক হতে চায় শুভদীপ।
তার কথা শুনেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বললেন, আমাদের স্কুলের যে সঙ্গীতের দল রয়েছে, তার অন্যতম গায়ক ও সিন্থেসাইজার শিল্পী শুভদীপ। খুব সুন্দর গানের গলা ওর। সে অঙ্কে ৯৯, পদার্থবিদ্যায় ৯৬, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ইংরেজিতে ৯৩, ভূগোলে ৯০, ইতিহাসে ৯৭ এবং বাংলায় ৯৩ নম্বর পেয়েছে। এই সাফল্য শুধু একা ভোগ করতে রাজি নয় শুভদীপ। তার কথায়, আমাকে যে শিক্ষকরা সাহায্য করেছেন, যে বড় দাদারা আমায় পড়িয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই সাফল্যের অংশীদার। তবে শুধু পড়াশোনাই নয়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার পছন্দের, সঙ্গে গোয়েন্দা কাহিনীও। ব্যোমকেশ, ফেলুদা, এমনকী শার্লস হোমস সবেতেই সমান আগ্রহ।