কোথায় মিলবে কতটা ছাড়? তৃতীয় দফায় ছাড়ের তথ্য দিলেন মুখ্যসচিব

কোথায় মিলবে কতটা ছাড়? তৃতীয় দফায় ছাড়ের তথ্য দিলেন মুখ্যসচিব

কলকাতা:  করোনা পরিস্থিতিতে তৃতীয় দফার লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ আরও দুই সপ্তাহ দেশজুড়ে চলবে লকডাউন৷ তবে তৃতীয় দফার লকডাউনে একাধিক বিষয়ে ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে পরিস্থিতি বুঝে কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যের হাতেই ন্যস্ত হয়েছে বলে নবান্নের বৈঠকে জানালেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা৷ 

লকডাউনের মধ্যে অর্থনীতি সচল করতেই এই ছাড় দেওয়া হচ্ছে৷ এর ফলে উপকৃত হবেন বহু মানুষ৷ তাঁরা উপার্জন রতে পারবেন৷ তবে একইসঙ্গে এর ফলে লকডাউন অনেকটাই লঘু হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা  করছে রাজ্য সরকার৷ কেন্দ্রের কাছে এই বিষয়ে লিখিতভাবেও জানানো হয়েছে৷ রাজীব সিনহা বলেন, রাজ্য সরকারও মানুষের জীবন ও জীবীকা নিয়ে একইভাবে চিন্তিত৷ তাই বাধ্যবাধকতার মধ্যেই কিছু কিছু কাজের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হচ্ছে৷ 

নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী, গ্রিন জোনে বাস পরিষেবা চালু করা যাবে৷ তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নিয়ম মেনে বাস চালাতে হবে৷ একটি বাসে ২০ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না৷ জেলার সীমানা ছাড়িয়ে বাইরে যেতে যাওয়া যাবে না৷ গ্রিন জোনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে গতিবিধি৷ বাস চালানোর জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে৷ 

অন্যদিকে স্ট্যান্ড অ্যালন শপ অর্থাৎ যে সকল দোকানগুলি বাজার এলাকা,মার্কেট কমপ্লেক্স বা শপিং মলের মধ্যে পড়ছে না সেই দোকানগুলি সোমবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ তবে কনটেনমেন্ট জোনে দোকান খোলা রাখা যাবে না৷ 

জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে আগে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল, সেগুলিই বহাল থাকবে বলে জানা মুখ্য সচিব৷ জরুরি পরিষেবার বাইরে যে সকল দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলি হল  মিস্টির দোকান, চা এবং পানের দোকান৷ মুখ্যসচিব বলেন, তবে চায়ের দোকানে বসে কোনও ভাবেই আড্ডা দেওয়া যাবে না৷ দোকান থেকে চা কিনে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খেতে হবে৷    

গ্রিন এবং অরেঞ্জ জোনে খনন কার্য শুরু করা যাবে৷ গ্রামঞ্চলে নির্মাণ কাজে অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ শহরাঞ্চলে নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে যেখানে শ্রমিকরা কাজের জায়গাতেই থাকছেন, কনটেনমেন্ট এলাকা বা অন্য কোনও এলাকা থেকে কাজে আসছে না, সেখানে কাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ তবে এর জন্য জেলা শাসকের অনুমতি প্রয়োজন৷ কলকাতা মিউনিসিপাল কমিশনেরও অনুমতি নিতে হবে৷

পাশাপাশি তৃতীয় দফায় বেসরকারি দফতরগুলি খোলার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে৷ তবে এক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ চালাতে হবে৷ সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বেসরকারি অফিস খোলা রাখা যাবে৷ তবে রাজ্যের সুপারিশ, ওয়ার্ক ফ্রম হোমই এই মুহূর্তে কাজের সেরা উপায়৷ অনলাইনে কাজ করার উপরই সরকার অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে৷ খুব প্রয়োজন না হলে বেসরকারি অফিস না খোলাই ভালো বলে জানান রাজীব সিনহা৷ এক্ষেত্রেও অফিস কমপ্লেক্স অবশ্যই কনটেনমেন্ট জোনের বাইরে হতে হবে৷ 

সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘন করা হলে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্য সচিব৷  এদিকে, ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে চালক ছাড়া দু’জনের বেশি যাত্রী থাকা যাবে না৷ সরকারি ছাড়পত্র নিয়ে তবেই পথে নামতে হবে৷ মার্কেট কমপ্লেক্স, শপিং মল এবং হকারদের বিষয়টি নিয়েও সরকার চিন্তাভাবনা করছে বলে জানা রাজীব সিনহা৷

এদিন মুখ্য সচিব আরও জানান,  রাজ্যে ধীরে ধীরে শিল্প খোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ জোনিং এবং কনটেনমেন্ট এলাকা ধরে কলকারখানা খোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে৷ এখনও পর্যন্ত ১০,০৯৬ টি আবেদন জমা পড়েছে৷ তার মধ্যে ৪,৩৪০ টি কলকারখানা খোলার অমুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে জুট মিল ও স্টিল কারখানার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিল্প৷ তবে কনটেনমেন্ট জোনভুক্ত হওয়ায় ৫,৩৬২টি আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে৷ বাকি পড়ে থাকা ৩৯৪টি আবেদন বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে৷ নতুন করে আবেদন জমা না পড়লে আগামীকালের মধ্যেই আবেদনগুলির মীমাংসা হয়ে যাবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − four =