কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনে ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে ১৯ মার্চ, ফের নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে চলেছে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের প্রতিনিধিরা৷ নিজেদের দাবি-দাওয়া জানিয়ে দেওয়া হবে ডেপুটেশন৷
লোকসভা নির্বাচনে ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা দাবিতে চিফ এলেক্টরাল অফিসার সহ বিভিন্ন জেলার ডিএম ও আঞ্চলিক স্তরে বিভিন্ন এলাকার বিডিওর কাছে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের পক্ষ থেকে ডেপুটেশন কর্মসূচি চলছে। গত ৩০ জানুয়ারি কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের দপ্তর অ্যাডিশনাল ইলেক্টোরাল অফিসার সঞ্জয় বসু সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এক প্রতিনিধি দল৷ সেখানে সংগঠনের তরফে দাবিপত্র পেশ করা হয়৷ কিছু প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা না হওয়ায় সুনিশ্চিত ভাবে বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি সঞ্জয়বাবু। কিন্তু, নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলেও ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়৷ ফলে, আগামী ১৯ মার্চ, কলকাতার নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে ফের ডেপুটেশনের কর্মসূচি শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের।
এই প্রসঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কিংকর অধিকারী ও ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভোটকর্মীর নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা যে গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলি নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরছি৷ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য বুথ পিছু প্রিজাইডিং অফিসারের-সহ ৬ জন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী দিয়ে ভোটার ও ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে৷ স্পর্শকাতর বুথগুলিতে দ্বিগুণ হারে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ভোট গ্রহণের শেষে ভোট বাক্স জমা দেওয়ার পর রিলিজ অর্ডার দিয়ে দিলেই নির্বাচন কমিশনের সমস্ত দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। ভোট গ্রহণের জন্য ভোট কর্মীদের বাড়ি থেকে রওয়না হওয়ার পর থেকে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত তাঁর জীবনের সমস্ত নিরাপত্তার ভার নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে৷ ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে ভোট কর্মীদের যথাযথ নিরাপত্তাসহ থাকা, খাওয়া ও শৌচালয়ের যথেষ্ট ব্যবস্থা রেখে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করতে হবে৷ প্রিজাইডিং অফিসারের অভিযোগের ভিত্তিতে সেক্টর অফিসার বা রিটার্নিং অফিসার যথাযথ ভূমিকা পালন না করে প্রিজাইডিং অফিসারকে অনৈতিক কাজে বাধ্য বা প্ররোচিত করলে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে তৎক্ষণাৎ উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷ শুধু মৌখিক আশ্বাস নয়, একজন ভোটকর্মী বাড়ি থেকে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছানো ও ভোটিং মেটেরিয়ালস জমা দেওয়ার পর বাড়ি ফেরার জন্য উপযুক্ত যানবাহন যথেষ্ট পরিমাণে রাখতে হবে। ভোটকর্মীদের হতাহতের ঘটনায় তৎক্ষণাৎ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যে কোন ভোটকর্মী অসুস্থ বা আহত হলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ সহ চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। প্রতিবন্ধীদের ভোট কর্মী হিসাবে নিয়োগ করে তাঁদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভোট কর্মীদের পোস্টাল ভোট বুথ অনুযায়ী গণনা না করে বিধানসভা বা লোকসভা কেন্দ্রের সমস্ত পোস্টাল ব্যালটকে একসাথে মিশিয়ে গণনা করতে হবে। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভেতরে এবং বাইরে সিসিটিভি বসাতে হবে পুরো বিষয়টি স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনা করার জন্য। ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য কমিশনের ডাকা বৈঠকে অন্যান্যদের পাশাপাশি ঐক্যমঞ্চের প্রতিনিধিদেরও ডাকতে হবে। কেননা, আমরাই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েও ভোট গ্রহণ করার কাজটি করে থাকি।’’
উল্লেখিত এই দাবিগুলি কার্যকর করার দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে সোচ্চার এই মঞ্চ। লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর ঐক্য মঞ্চ ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন দপ্তরে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন দিয়ে চলেছে। আগামী ১৯ মার্চ, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কলকাতায় চিফ এলেক্টরাল অফিসে মঞ্চের পক্ষ থেকে ডেপুটেশনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে খবর৷ নিরাপত্তার বিষয়টি যথার্থভাবে গুরুত্ব দিয়ে কমিশন যদি তার ভূমিকা পালন না করেন তাহলে ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের আহ্বান জানানো হবে বলে জানানো হয়েছে৷