সামাজিক দায়িত্ব পালনে করোনা যুদ্ধে সামিল ২৯ দিনের সেই অনশনকারী

সামাজিক দায়িত্ব পালনে করোনা যুদ্ধে সামিল ২৯ দিনের সেই অনশনকারী

কলকাতা:  রাজ্য সরকারের চিন্তা বাড়িয়ে টানা ২৯ দিনের অনশন করে গোটা দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের আন্দোলনকারী৷ টানা অনশন, আন্দোলন করে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে আনতে সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা৷ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী নতুন স্কুলে যোগদান করেছেন৷ দীর্ঘ লড়াই, আন্দোলন চাকরির স্বীকৃতি মিললেও সামাজিক দায়বদ্ধতা ভোলেননি ২৯ দিনের অনশনকারী সেই চাকরিপ্রার্থীরা৷ এবার করোনা মোকাবিলায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তাঁরা৷

সালটা ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯৷ একদল শিক্ষক পদপ্রার্থী, অবস্থান-বিক্ষোভ এর জন্য গান্ধী মূর্তি পাদদেশে এসেছিল৷ স্বচ্ছভাবে গেজেট মেনে, সমস্ত শূন্যপদে নিয়োগ করার দাবি নিয়ে৷ পুলিশের তাড়া খেয়ে প্রাথমিক অবস্থায় তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিলেন৷ নিমেষের মধ্যেই সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে মেয় রোডে প্রেস ক্লাবের সামনে বসে পড়েন ধর্নায়৷ ধর্না মঞ্চে তাঁরা সংগঠিত হয়ে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে এই লড়াই শুরু করেছিলেন৷ সেই মঞ্চের নাম ‘যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ’৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতে থাকে দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই৷ প্রকৃতির সঙ্গে সংঘর্ষ, প্রশাসনের সঙ্গে সংঘর্ষ৷ চাকরি চাই, ছয় বছর নিয়োগ নেই, বিপুলসংখ্যক শূন্যপদে নিয়োগ চায়৷ লড়াই যত এগিয়েছে, গোটা ভারতবর্ষে এই লড়াই সাড়া ফেলেছে৷ প্রেসক্লাব হয়ে উঠেছে চাঁদের হাট৷ শিল্পী, সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সকলেই এই আন্দোলনে এসে আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন৷

পরে অবশেষে ২৯ মার্চ ২০১৯ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং হাজির হন আন্দোলনকারীদের কাছে৷ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ২৯ দিনের এই অনশন বিফল হবে না৷ বলেন, ‘‘তোমাদের যাতে চাকরি নিশ্চিত করা যায় তার ব্যবস্থা আমি করব৷’’ অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি বাক্যে অনশনকারীরা সাময়িকভাবে অনশন প্রত্যাহার করে৷ তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল৷ পার হয়েছে একটা বছর৷ চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি সুনিশ্চিত হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে এখনও বিশেষ কিছুই জানা যায়নি৷

গোটা বিশ্ব-সহ ভারতবর্ষে এখন করোনার আতঙ্কে চলছে লকডাউন৷ হঠাৎই দেখা গেল ২৯ দিনের অনশনকারীদের মঞ্চ ‘যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ’কে৷ সামাজিক এবং মানবিক দায়বদ্ধতাকে সামনে রেখে তারা বেরিয়ে পড়েছে দুস্থ এবং অসহায়দের ত্রাণ বিলি করতে৷ জানিয়েছেন, তাঁরা শুধু চাকরির লড়াই লড়ে না, নিজেদের চাকরির স্বার্থের পাশাপাশি সমাজ মানুষের প্রতি একটা মানবিক দায়বদ্ধতাও তাদের আছে৷ গোটা পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন জেলাতে তারা এই ত্রাণ সামগ্রী বিলি করবে৷ কিন্তু যারা আজকে ত্রাণ বিলি করছে, তাঁদের নিজেদের অবস্থা কেমন? তাঁদের স্বপ্ন কি সত্যি হয়েছে? তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কি বাস্তবায়িত হয়েছে? আগামী দিনে নিশ্চয়ই এর উত্তর পাওয়া যাবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *