কলকাতা: বাম আমল থেকে তৃণমূল সরকারের সময়কাল, পুরসভা, পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় নির্বাচনে পাশাপাশি বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও অশান্তি হয় এখানে, তা ভারতের অন্য কোনও রাজ্যে হয় না। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সেই ‘ঐতিহ্য’ বজায় রাখল বাংলা। জেলায় জেলায় রক্তের হোলি খেলা হল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দু’জনেই ফের কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পঞ্চায়েত নির্বাচনের সন্ত্রাস নিয়ে সেভাবে আক্রমণাত্মক বিবৃতি দেননি। এই আবহের মধ্যে দিল্লি গেলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। যথারীতি রাজ্যপালের দিল্লি সফর নিয়ে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
শনিবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন কেড়ে নিয়েছে বহু তাজা প্রাণ। জেলায় জেলায় যেভাবে ভোটকে কেন্দ্র করে রক্ত ঝরেছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্যবাসী। এই আবহের মধ্যে রবিবার সন্ধ্যায় দিল্লি গেলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে যে বেলাগাম সন্ত্রাস হয়েছে সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে জমা দিতেই কী রাজ্যপাল দিল্লি গিয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে রাজনৈতিক মহল। যদিও রাজ্যপাল বলছেন তিনি দিল্লির তাজা বাতাস নিতে দিল্লি এসেছেন। তবে কি নির্বাচনী সন্ত্রাসে পশ্চিমবঙ্গের বাতাস দূষিত হয়ে গিয়েছে, এটাই বলতে চাইলেন রাজ্যপাল? এভাবেই তিনি দিয়ে বিঁধলেন রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে?
স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন শেষ হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যপালের দিল্লি সফর নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। ঘটনা হল শনিবার বিকেলে রাজ্যপাল বলেছিলেন, “একজন রাজ্যপালের যা কর্তব্য তাই করব।”
তখনই জল্পনা শুরু হয় কি কর্তব্য করার কথা বলছেন তিনি? নির্বাচনের আগে সন্ত্রাস কবলিত বেশ কয়েকটি জায়গায় ছুটে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তিনি ‘গ্রাউন্ড জিরো’ রাজ্যপাল, যেখানেই হিংসার ঘটনা হবে সেখানেই ছুটে যাবেন, এমনটাই বলতে শোনা গিয়েছিল আনন্দ বোসকে। শুধু তাই নয়, মনোনয়ন পর্বের শুরু থেকেই যে সন্ত্রাস শুরু হয় বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে, তা নিয়ে রাজ্যপাল তীব্র আক্রমণ করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য প্রশাসনকে। তাই শনিবার ভোটের দিন যেভাবে হিংসায় এতজনের মৃত্যু হল তা নিয়ে রাজ্যপাল ফের কমিশন ও রাজ্য প্রশাসনের উদ্দেশে কামান দাগবেন বলেই সবাই মনে করেছিলেন। কিন্তু শনিবার রাজ্যপালকে ভোটে হিংসা নিয়ে সেভাবে কিছু বলতে দেখা যায়নি। সেখানে রাজ্যপাল শুধু বলেছিলেন, ”ভোট বুলেটে নয়, ব্যালটে হওয়া উচিত।”
এ বিষয়ে তিনি কি কোনও পদক্ষেপ করতে চান? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে তখন রাজ্যপালকে শুধু বলতে শোনা গিয়েছিল, “একজন রাজ্যপালের যা করণীয় তাই করব।” রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের অজুহাতে সংবিধানের ৩৫৫ নম্বর ধারা অনুসারে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের সুপারিশ করতে পারেন রাজ্যপাল। ভারতীয় সংবিধানে সেটাই বলা আছে। তবে কি রাজ্যপাল সেই পথেই হাঁটতে চাইছেন? এই গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল বারবার দাবি করেছিল শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হবে। কিন্তু যথারীতি তার উল্টোটাই ঘটল। আর সেই সূত্রেই ফের ৩৫৫ এবং ৩৫৬ জারির দাবি উঠতে লাগল বিরোধীদের তরফ থেকে। বাংলার ভোটকে ঘিরে এই ট্র্যাডিশন কবে বন্ধ হবে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।