কলকাতা: গত তিন মাসে দেশ জুড়ে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে রেকর্ড টাকা উদ্ধার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ বারবার উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের নাম৷ শনিবার কলকাতার গার্ডেনরিচে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে ১৭ কোটির বেশি৷ আর তাতেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফেলেছে ইডি৷ এত কম সময়ে এত পরিমাণে নগদ উদ্ধারের ঘটনা সাম্প্রতিককালে ঘটেনি৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, উদ্ধার হওয়া এই বিপুল পরিমাণ টাকা এখন কী করা হবে? কী হবে ‘কালা ধন’ এর ভবিষ্যৎ?
আরও পড়ুন- নিম্নচাপের দাপটে রতভর ভারী বৃষ্টি কলকাতায়, কতদিন চলবে দুর্যোগ?
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ইডি কাড়ি কাড়ি টাকা উদ্ধার করলেও তা নিজেদের দফতরে রাখতে পারবে না তারা৷ কারণ, টাকা বাজেয়াপ্ত করার অধিকার থাকলেও সেই টাকা নিজেদের হেফাজতে রাখার অধিকার নেই ইডি-র৷ অভিযানে চালিয়ে নগদ উদ্ধারের পর সবার আগে অভিযুক্তকে টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। অভিযুক্তকে উদ্ধার হওয়া টাকার সপক্ষে উপযুক্ত নথি দেখানোর জন্য সময়ও দেওয়া হয়। এর পরেও অভিযুক্তর কাছ থেকে সদুত্তর পাওয়া না গেলে ওই টাকা হিসাব-বহির্ভূত এবং অবৈধ বলে ধরে নেওয়া হয়।
টাকা নয়ছয় প্রতিরোধী আইন (পিএমএলএ)-এ উদ্ধার হওয়া নগদকে বেআইনি হিসাবে চিহ্নিত করে তা বাজেয়াপ্ত করে ইডি৷ এর পর সেই টাকা গোনার জন্য ডাক পড়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিকদের। নোট গোনার যন্ত্র দিয়ে গোনা হয় টাকা। এর পর ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের উপস্থিতিতেই বাজেয়াপ্ত হওয়া টাকার অঙ্ক ও জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করা হয়। কোন মূল্যের ক’টি নোট রয়েছে, সেই হিসাবও লিখে রাখা হয়। এর পর আধিকারিকদের উপস্থিতিতে বাজেয়াপ্ত হওয়া সেই টাকা ট্রাঙ্কে ভরে সিল করে দেওয়া হয়। তৈরি করা হয় সিজার মেমো৷ এর পর বাক্সবন্দি কালো টাকা চলে যায় স্টেট ব্যাঙ্কের কোনও একটি শাখায়। ব্যক্তিগত আমানতে (পিডি) তা জমা পড়ে যায়৷
ব্যাঙ্ক থেকে সেই নগদ জমা পড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ট্রেজারিতে৷ তবে সরকার, ইডি বা ব্যাঙ্ক কেউই উদ্ধার হওয়া এই বেআইনি নগদ ব্যবহার করতে পারে না। ইডি প্রভিশনাল অ্যাটাচমেন্ট অর্ডার তৈরি করে এবং পরবর্তী ছ’মাসের মধ্যে সেই অ্যাটাচমেন্ট অনুমোদন করে বিচারবিভাগ। ছয় মাসের মধ্যে বিচারাধীন মামলার বিচারপতিকে দিয়ে এই বাজেয়াপ্ত হওয়া টাকার পরিমাণ নিশ্চিত করানো হয়৷
শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাঙ্কের অধীনেই থাকে এই বিপুল ধনরাশি। অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত হলে সমস্ত নগদ কেন্দ্রের হাতে চলে আসে। কিন্তু, অভিযুক্ত যদি বেকসুর খালাস পেয়ে যায়, তাহলে বাজেয়াপ্ত হওয়া সমস্ত টাকা তাঁর হাতে তুলে দিতে হয়৷
গত অগাস্ট মাসে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দু’টি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নগদ ৫০ কোটির বেশি নগদ টাকা উদ্ধার করে ইডি। তার দিন কয়েক আগে ঝাড়খণ্ড খনি দুর্নীতি-কাণ্ডের তদন্তে নেমে ২০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়৷ শনিবার গার্ডেনরিচে পরিবহণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়ে ১৭.৩২ কোটি টাকা উদ্ধার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা৷