নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। এ শহর ফুটবলের শহর, খেলার শহর, সংস্কৃতির শহর। বাংলার নাটক ও সিনেমার কথা গোটা দেশ জানে। বঙ্গ সন্তান সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরেই বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতের অগণিত সম্মান এসেছে বাংলা তথা গোটা দেশে। যা আজও সবার মনের মণিকোঠায় রয়েছে। ঘটনা হল তেইশের দুর্গাপুজোতেও বেশ কয়েকটি বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলি হল সুপারস্টার দেব অভিনীত ‘বাঘাযতীন’, সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘দশম অবতার’, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায় পরিচালিত ‘রক্তবীজ’ এবং কোয়েল মল্লিক অভিনীত ‘জঙ্গলে মিতিন মাসী’। পুজোর আগেই চারটি ছবি বিভিন্ন হলে রিলিজ করেছে। কমবেশি প্রত্যেকটি ছবি দর্শকের কাছে যথেষ্ট প্রশংসিত হচ্ছে।
হিন্দি ছবির জাঁকচমক বা বাজেটের সঙ্গে বাংলা ছবি কোনও দিনই পাল্লা দিতে পারেনি। আগামী দিনেও সেটা সম্ভব নয়। তবু পরিচালকের সূক্ষ্ম কাজ, অভিনেতা অভিনেত্রীদের মনকাড়া অভিনয় দর্শকদের নজর কাড়ে। অতীতেও দেখা গিয়েছে বিবর্ণ সাদা কালো বাংলা ছবি সব দিক দিয়ে পিছনে ফেলে দিয়েছে বলিউডের বহু খ্যাতনামা ছবিকে। পুজোর আগে শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’ ও সানি দেওলের ‘গদর-২’ রিলিজ করে বিপুল ব্যবসা করেছে। সেই ব্যবসা কোনও দিনই করতে পারবে না বাংলা ছবি। তবুও নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে বাংলা ছবি হচ্ছে, এবং মানুষ সেগুলি দেখে প্রশংসা করছেন এটাই কী যথেষ্ট নয়? এই পরিস্থিতিতে চারটি বাংলা ছবি নিয়ে যথেষ্ট চর্চা চলছে সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে।
বিপ্লবী বাঘাযতীনকে নিয়ে যে ছবি নির্মিত হয়েছে তার জন্য দু’বছরের বেশি সময় ধরে পড়াশোনা ও হোমওয়ার্ক করেছেন অভিনেতা দেব-সহ ছবিটির সঙ্গে যুক্ত থাকা অন্যান্য কলাকুশলী ও পরিচালক। এটি দেবের জীবনে অন্যতম সেরা ছবি বলে অনেকেই মনে করছেন। অন্যদিকে মিতিন মাসী চরিত্রে দর্শকরা বহু আগেই গ্রহণ করেছেন কোয়েল মল্লিককে। আর খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ড নিয়ে নির্মিত ছবি ‘রক্তবীজ’-এ অভিনয় করেছেন প্রবীণ অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি আবীর চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া দশম অবতার ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, জয়া আহসান। সবমিলিয়ে চারটি ছবি বক্স অফিসে এখনও পর্যন্ত ভালই ব্যবসা করছে বলে খবর।
সবথেকে বড় কথা বাংলা ছবির প্রতি মানুষের যথেষ্ট আকর্ষণ দেখা যাচ্ছে। একটা সময় বাংলা ছবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু পরিস্থিতির বদল হচ্ছে। বাংলায় এখন যথেষ্ট স্মার্ট ছবি তৈরি হচ্ছে। সারা বছর ইচ্ছা থাকলেও ছবি দেখতে সময় পান না অনেকেই। তাই পুজোর ছুটির মধ্যে ঠাকুর দেখার পাশাপাশি অনেকেই হলে গিয়ে সিনেমা দেখছেন। স্বাভাবিকভাবেই রিলিজ হওয়া চারটি বাংলা ছবিই ভাল ব্যবসা করছে। একটা সময় ছিল দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে নাটকের হলগুলিও হাউসফুল থাকত। তবে নাটক নিয়ে বাঙালির একটা বড় অংশ এখন ততটা ভাবছে না বলেই একাধিক হল সূত্রে খবর। সেই জায়গা থেকে নাটকের তুলনায় বাংলা সিনেমা নিয়ে দর্শকদের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। তাই পুজো শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও রিলিজ হওয়া বাংলা ছবিগুলি চুটিয়ে ব্যবসা করতে থাকবে বলে আশা পরিচালক, প্রযোজক ও অভিনেতা অভিনেত্রীদের।