শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়: উদ্বেগ বাড়িয়ে দিন দিন করোনা ভাঙছে সমস্ত রেকর্ড৷ প্রথমবার একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ হাজার৷ শেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩ লক্ষের বেশি৷ আগামী শনিবার থেকে ১৮ বছর বয়েসের ওপর থেকে সবাইকে দেওয়া হবে টিকা৷ কিন্তু, টিকা নিতে চমর ভোগান্তি পোয়াতে হচ্ছে সাধারণ জনতাকে৷ টিকার লাইনে উধাও দূরত্ব বিধি৷ সব মিলিয়ে বেলাগাম পরিস্থিতি৷ কিন্তু বাঁচার উপায় কী? এই ব্যাপারে বিশেষ পরামর্শ দিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক সিঞ্চন দাস৷ তিনি বললেন, অকারণ আতঙ্ক নয়, তবে বদলাতে হবে ‘লাইফস্টাইল’। সকলের উচিত নির্দিষ্ট নিয়ম অবশ্যই মেনে চলা।
আজ বিকেলকে সাক্ষাতকার দিয়ে ডাঃ সিঞ্চন দাস জানাচ্ছেন, অকারণ আতঙ্কিত না হয়ে সাধারণ মানুষের উচিত নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা এবং অবশ্যই নিজের জীবনযাপনের পদ্ধতি বদলানো। পুষ্টিকর খাদ্য থেকে শুরু করে সঠিক সময় ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজন। একই সঙ্গে কাজের চাপ থেকে শুরু করে মানসিক চাপ কমাতে হবে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, এই ভাইরাসটি এখন বায়ুবাহিত তাই কোনরকম ভাবে সেটি হালকা ভাবে নিলে চলবে না। বাড়ির বাইরে বেরলে অবশ্যই মাস্ক পরা জরুরী কিন্তু তা কাপড় বা রুমাল হলে চলবে না। এন৯৫ মাস্ক না পরতে পারলেও সারজিক্যাল মাস্ক পরতে হবে। অহেতুক বাড়ির বাইরে বেরলে চলবে না এবং বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে এলে অবশ্যই সব জিনিস আগে ভাল করে স্যানিটাইজ করতে হবে। জামাকাপড়, ব্যাগ থেকেও ভাইরাস ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
গরম খাওয়ার খেলে করোনা হওয়ার সম্ভাবনা কম, এই ধারণা একেবারে নস্যাত করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, এই ধারণা একটা মিথ। এর কোনও সত্যতা নেই। তবে অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে, বেশি করে জল খেতে হবে এবং ‘হেলদি লাইফস্টাইল’ লিড করতে হবে বলে জানান তিনি। অনেকেই মনে করছে যে নেশা করলে নাকি করোনা হবে না। এই ধারণাকে সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে ডাঃ সিঞ্চন দাস বলছেন, আগে উচিত সমস্ত পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান বন্ধ করা, মদের দোকান বন্ধ করা। নেশার ফলে করোনা হবে না এটা এক্কেবারে ভুল ধারণা বরং করোনা হওয়ার পরিমাণ বেড়ে যাবে। তিনি বারবার বলছেন, নিজের শরীরে ইমিউনিটি বৃদ্ধি করাই হবে আসল লক্ষ্য, তার জন্য নিয়মমাফিক ঘুম দরকার এবং মানসিক চাপ কমাতে হবে।
তবে ভ্যাকসিন নিয়ে কিছুটা হলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। বলছেন, এই দুটি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল সম্পর্কে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। আর ভ্যাকসিন নিলেই করোনা হবে না তার কোনও গ্যারেন্টি নেই। শরীরে যদি প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকে বা কম থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির করোনা হবেই এমন সম্ভাবনা প্রবল। তাঁর কথায়, কে ভ্যাকসিন নেবেন বা নেবেন না সেটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এই ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে একটা সমস্যার ব্যাপার সামনে আসছে যেটা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের সময়েও দেখা গিয়েছিল। সেটা হল, ‘গুলেইন ব্যারে সিন্ড্রোম’ অর্থাৎ নার্ভের সমস্যা, যার থেকে আংশিক প্যারালাইসিস পর্যন্ত হতে পারে। তাই তিনি বলছেন, অবশ্যই এই ব্যাপারে ডাক্তারের কাছে থেকে পরামর্শ নিতে। কেউ যেন নিজেই নিজের ডাক্তার না হয়ে যান।