কলকাতা: বহিরাগত ইস্যুকে হাতিয়ার করে বিজেপি’র বিরুদ্ধে ময়দানে ঝাঁপিয়েছেন তৃণমূল নেতারা৷ বারবার তাঁদের বহিরাগত কাঁটায় বিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে৷ এদিন এই বহিরাগত ইস্যু তুলেই তৃণমূল কংগ্রেসকে তুলোধোনা করলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷
আরও পড়ুন- মমতার স্বাস্থ্য দফতরের কাজে প্রশংসায় পঞ্চমুখ কেন্দ্র! শংসাপত্র পেল ন্যাশনাল মেডিক্যাল
এদিন তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই বহিরাগত বলে রব উঠেছে৷ যাঁরা বাংলার মানুষের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে তাঁরাই আজ বহিরগত বলে সুর চড়াচ্ছে৷ যে সকল বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলন করেছিলেন, ফাঁসিতে ঝুলেছিলেন বা ইংরেজদের গুলিতে শহিদ হয়েছিল তাঁরা কি কেবল বাংলার জন্য এই আন্দোলন করেছিলেন? নাকি তাঁরা সমগ্র দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন৷ আজ যেখানেই গণ্ডগোল হচ্ছে, সেখানেই বলা হচ্ছে বাইরের লোক এসে করেছে৷ বাইরের লোক শব্দটি ব্যবহার করে অনেক কিছুই বোঝানোর চেষ্টা চলছে৷ মু্খ্যমন্ত্রী বলেছেন বাইরের লোকেদের ভয় পাবেন না৷ ওঁনার আশে পাশে যে সকল বহিরাগত ঘুরে বেড়াচ্ছেন, উনি কি তাঁদের ভয় না পাওয়ার কথা বলছেন? আসলে ওঁনার দলের অন্দরেই আওয়াজ উঠেছে, আমরা বহিরাগতদের দাদাগিড়ি মানব না৷ বাইরের লোক এসে তাঁর দলের কৌশল ঠিক করছে৷ নেতৃত্ব ঠিক করছে৷ তাই তাঁরা দিবানিশি বহিরাগতদের স্বপ্ন দেখছেন৷
রাজ্য বিজেপি সভাপতি আরও বলেন, রাজ্য সভায় তৃণমূলের দু’জন সাংসদ ছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে একজন অসমের৷ কিন্তু উনি বাংলা থেকে রাজ্যসভায় গিয়েছিলেন৷ অপর জন বাংলাদেশ থেকে অসম হয়ে এখানে এসেছিলেন৷ তাঁরা কি ভাবে বাংলার লোক হয়ে গেলেন? অভিষেক মনু সিংভিও এখান থেকে তৃণমূলের ভোট নেতা হয়ে গিয়েছেন৷ অথচ আজকে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে বহিরাগত বলা হচ্ছে৷ ওঁনারা যখন ত্রিপুরা, অসম, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডে যান তখন তো তাঁদের কেউ বহিরাগত বলে না৷ পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছেন৷ সেখানেও তাঁদের কেউ বহিরাগত বলেনি৷ লকডাউনে তাঁদের ফেরানোর কোনও সদিচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে দেখা যায়নি৷ কিন্তু বহিরাগত বলে তাঁদের আটকানোর চেষ্টা চলেছে৷ আজ যদি প্রতিটি রাজ্যের লোক বাঙালিদের বহিরাগত বলে ফিরিয়ে দেয় তাহলে কি হবে? তাঁদের কি চাকরি দিতে পারবেন মুখ্যমন্ত্রী? দিলীপ বাবুর অভিযোগ, রাজনীতির করতে গিয়ে বাঙালিদের অপমান করছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বাঙালিরা কোনও দিনই ক্ষুদ্রমনের ছিল না৷ ভগবানের মধ্যেও ভেদাভেদ করা হচ্ছে৷ রামচন্দ্র, ছট মাই বহিরাগত৷ কালি, দুর্গা বাংলার৷ উনি হয়তো ভেবে নিয়েছেন এটা ‘পশ্চিমবঙ্গ দেশ’ হয়ে গিয়েছে৷ এই ভেদাভেদ আগে কখনই ছিল না৷ বাংলা সম্পর্কে সারা দেশের মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর উপদেশ, ভেবে চিন্তে কথা বলবেন৷ তা না হলে বাঙালিরাই অপমানিত হবে৷
আরও পড়ুন- বিজেপিতে যোগ দেবেন সৌগত-সহ ৫ তৃণমূল সাংসদ! বিস্ফোরক দাবি অর্জুনের
দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, বাংলাকে গুজরাত বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছি৷ কারণ আজ গুজরাতই সারা দেশের মানুষকে চাল-ডাল-তরকারি দিচ্ছে৷ বাংলার লক্ষাধিক মানুষ গুজরাতে আছেন৷ তাঁরা সেখানে সম্মানের সঙ্গে সোনার কাজ করছেন৷ গুজরাতের কলকারখানায় লক্ষ লক্ষ বাঙালি কাজ করছেন৷ এক সময় বামপন্থীরা গুজরাতের নামে ভয় দেখিয়েছিল৷ গুজরাত মানে দাঙ্গা নয়৷ গুজরাতের নামে ভয় দেখিয়ে যে সংখ্যালঘুর ভোট আদায় করা হয়েছিল, সেই সংখ্যালঘুরা আজ গুজরাতে গিয়েই চাকরি করছে৷ কারণ বাংলায় চাকরি নেই৷ যাঁরা সংখ্যালঘুদের উস্কেছিল, তারাই আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে৷
তাঁর কথায়, বাংলায় সমস্ত শিল্পকে ধ্বংস করা হয়েছে৷ এখানে কোনও নিরাপত্তা নেই৷ গুজরাত আইন শৃঙ্খলা ও মহিলা সুরক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে৷ আর পশ্চিমবঙ্গ নারী নির্যাতন, অপহরণে এক নম্বরে৷ ফলে বাংলা যদি গুজরাত হয় তাহলে ভালোই হবে৷ সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, এরাজ্যে সংখ্যালঘুদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ৷ এখানে সবুজসাথী সাইকেল পাওয়ার জন্য সংখ্যালঘুরা তৃণমূলের পিছনে ঘুরছে৷ আর গুজরাতের সংখ্যালঘুরা বিদেশি গাড়িতে চড়ছে৷ ৭ শতাংশ সংখ্যালঘু সরকারি চাকরি করে গুজরাতে৷ এখানে দেড় শতাংশও চাকরি হয় না৷ আর বহিরাগতই যদি বলা হয় তাহলে গান্ধীজিও বহিরাগত ছিলেন৷ তিনিও গুজরাতের মানুষ ছিলেন৷ তাহলে তাঁকে কেন জাতির জনক বলা হয় তাঁকে৷ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন দিলীপ ঘোষ৷