দিদিমণি বাংলাকে লন্ডনের বদলে ইরাক বানিয়ে দেবেন: দিলীপ

দিদিমণি বাংলাকে লন্ডনের বদলে ইরাক বানিয়ে দেবেন: দিলীপ

বারাসত: বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে ঘটল বিস্ফোরণ৷ নৈহাটির গঙ্গার পাড়ে বিস্ফোরণের অভিঘাতে কেঁপে উঠল চুঁচুড়া৷ নৈহাটিতে বাজেয়াপ্ত বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে৷ নৈহাটিতে গঙ্গার পাড়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় কেঁপে ওঠে চুঁচুড়া পুরসভা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা৷ গুরুতর ভাবে জখম হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মী৷ আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ ঘটনায় এবার মুখ খুললেন বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর৷ বাংলাকে দিদিমণিকে লন্ডন বানাতে না পারলেও ইরাক বানিয়ে দেবেন৷ নৈহাটি কাণ্ডে বিস্ফোরক মন্তব্য রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের৷

আজ সন্ধ্যায় বিজেপির দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠক করে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আজ নৈহাটিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে৷ এর পেছনে গভীর চক্রান্ত রয়েছে৷ এটা ভাবতে গেলেই আমাদের শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে৷ আজ পশ্চিমবঙ্গকে  পশ্চিম বাংলাদেশ বানানোর পরিকল্পনা চলছে৷ বাংলায় একাধিক বিস্ফোরণ হয়েছে৷ আজ নৈহাটিতে বিস্ফোরণ ঘটল৷ দেখা যাচ্ছে, বিস্ফোরণের সংখ্যাও বাড়ছে৷ তীব্রতা বাড়ছে৷ আজ যে বিস্ফোরণের ভিডিও দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে হিরোশিমা-নাগাসাকি সেই বিস্ফোরণের মতো যেন মিলে যাচ্ছে৷’’

দিলীপের আরও দাবি, ‘‘এটা ভীষণ ভয়ঙ্কর বিষয়৷ আমার মনে হয়, পুলিশের লোকেরা আগে এরকম বিস্ফোরণ বা আগে দেখেননি৷ এই বোমায় কত শক্তি হতে পারে, কী কেমিক্যাল আছে তার ভেতরে? তাও বুঝতে পারেনি পুলিশ৷ ঠিক যেন পারমাণবিক বিস্ফোরণের মতো ঘটনা৷  ছবি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে৷ নদীর দুই কিলোমিটার দূরের সমস্ত বাড়ির কাঁচ ভেঙে গিয়েছে৷ পুলিশের গাড়ি চুরমার হয়ে গিয়েছে৷ বাচ্চা-বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন৷ অনেকে কানের পর্দা ফেটে গিয়েছে৷ এটা খুব সাধারন বিস্ফোরণ নয়৷ এই বিস্ফোরণের জন্য কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিলেই চলবে না৷ আপনি কাঁচ ভাঙার দাম দিতে পারেন, মানুষের দাম দিতে পারবেন আপনি?’’

তাঁর আরও দাবি, ‘‘তৃণমূল ভাবছে ছোট বোমায় এখন আর কাজ হবে না৷ ভোট করাতে গেলে দরকার হবে শক্তিশালী বোমা৷ আর সেগুলি ওখানে তৈরি হচ্ছিল৷ বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে জামাত জঙ্গিরা এই সমস্ত কার্যকলাপ করছে৷ বারবার এমন ধরনের ঘটনা চেপে দেওয়া হচ্ছে৷ মমতা ব্যানার্জি নেতৃত্বে এই সব ঘটছে৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনের কাজ ছেড়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ আর মনে হয়, তিনি পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মানুষকে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছেন৷ পশ্চিমবঙ্গকে ইরাক বানিয়ে দিয়েছেন৷ পশ্চিমবঙ্গকে লন্ডন বানাতে পারেননি, সিরিয়া বানিয়ে দিয়ে যাবেন মমতা৷ আমরা দলের তরফে এনআইএ তদন্ত দাবি করছি৷’’

এদিন টুইটে বিস্ফোরণের ছবি প্রকাশ করে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘‘এই বিস্ফোরণ কল্পনা করা যাচ্ছে না৷ এটি গুরুতর বিষয়৷ বিস্ফোরণের তীব্রতা এবং যে কারণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা বিবেচনা করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক৷ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তদন্ত হওয়া জরুরি৷ বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি সন্ধান করতে পারেন৷ এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷’’

এদিন সন্ধ্যায় চুঁচুড়ায় বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়৷ ক্ষতিগ্রস্তদের কথা বলার পর সংবাদমাধ্যমে লকেট বলেন, ‘‘বাংলায় জিহাদি কার্যকলাপ চলছে৷ এই ঘটনা এনআইএ কে দিয়ে তদন্ত করানো উচিত৷ আমি লোকসভায় এই নিয়ে দাবি তুলব৷ আমরা খাগড়াগড় বিস্ফোরণ দেখেছি৷ এছাও পিংলা-সহ বাংলায় বিভিন্ন প্রান্তে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা দেখছি৷ আমি চাইছি, নৈহাটির ঘটনায় তদন্ত করুক এনআইএ৷ এর পেছনে বড় চক্রান্ত রয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গকে বোমা শিল্পে পরিণত করেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী যদি রাজ্যে বোমা শিল্প গড়ে তুলতে চায়, তাহলে কেন সেই বোমা গুলিকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশকে পাঠানোর ব্যবস্থা করল না৷ কীভাবে এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক এল? এর তদন্ত হওয়া উচিত৷’’

সাংবাদিক বৈঠক করে মোহাম্মদ সেলিমের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় পুলিশকে বলে দিয়েছেন বোমা ও বাজি দু’টিকে এক করে দেখতে৷ আজ পুলিশের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে এত বড় বিস্ফোরণ ঘটে গেল৷ বেআইনি বাজি-বোমা তৈরির কারখানা বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি৷ কারণ এর পেছনে তৃণমূলের নেতারা জড়িত৷ আজ এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করল, তৃণমূল ও পুলিশের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা৷

ভেঙে গিয়েছে বাড়ির জানালার কাঁচ৷ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে চুঁচুড়া পুরভবন -সহ বেশ কয়েকটি বাড়ি৷ প্রতিবাদে পথ অবরোধ চঁচুড়ার গঙ্গার পাড়ের বাসিন্দাদের৷ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ বিরুদ্ধে চড়াও নৈহাটির বাসিন্দাদের৷ পুলিশের দু’টি গাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা৷ বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল নৈহাটি ও চুঁচুড়ার বেশিরভাগ এলাকা কেঁপে ওঠে৷ ছড়িয়ে পড়ে তীব্র আতঙ্ক৷ এমন কী বিস্ফোরক ছিল, যাতে কেঁপে উঠল গঙ্গার দুই পাড়? বাজি না আইইডি? নাকি পরমাণু বোমা? প্রশ্ন তুলছে জনতা৷

বাজি নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছিল গত তিন চারদিন ধরে৷ এরকম দাবি গঙ্গার দু’পারের বাসিন্দাদের৷ গত ৩ জানুয়ারি নৈহাটি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে৷ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল চার জনের৷ এই ঘটনার পর পুলিশ তল্লাশি শুরু করে৷ অভিযানে নেমে নৈহাটির রামঘাট ও চারঘাট এলাকা থেকে বাজেয়াপ্ত হয় বিপুল বিস্ফোরক৷ বাজি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে আজ বিস্ফোরণ ঘটে৷ নৈহাটির রামঘাটের গঙ্গার পাড়ে বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে নৈহাটি ও চুঁচুড়া৷ চুঁচুড়া বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন চন্দননগরের সিপি৷ শুরু হয়েছে পুলিশি তদন্ত৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *