নিজস্ব প্রতিনিধি: যাকে বলে উড়ে এসে জুড়ে বসা! বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে আড়ালে আবডালে এমনটাই বলে থাকেন দিলীপ ঘোষের অনুগামীরা। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসে শুভেন্দু যেভাবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে, তা একেবারেই ভাল চোখে দেখছেন না আদি বিজেপি নেতৃত্ব। ঘটনা হল বিজেপিতে এসেই দিলীপ ঘোষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন শুভেন্দু। যা এখন মেটা তো দূরের কথা, আরও বেড়ে গিয়েছে। এতে রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও চরমে উঠেছে। আর যখন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ থেকে দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে দেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, তখন গোটা বিষয়টি সম্পূর্ণ অন্য মাত্রা পায়। স্বাভাবিকভাবেই দিলীপ ঘোষ এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সেটা সদ্য রাজ্য সফরে এসে ভাল করেই বুঝতে পেরেছেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা। এরপরই দিল্লিতে দিলীপকে দ্রুত ডেকে পাঠিয়ে বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু প্রশ্ন, যে আচরণ দিলীপের সঙ্গে করা হল, সেটা কি সমর্থন করা যায়?
বঙ্গ বিজেপির সর্বকালের সেরা সভাপতি নিঃসন্দেহে দিলীপ ঘোষ। তাঁর পারফরম্যান্সের ধারেকাছে আসবেন না কেউ। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। এবার বাকিদের কাজ হওয়া উচিত পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এগোনো তো দূরের কথা, বিজেপি দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। এই আবহের মধ্যেই দিলীপকে ডেকে পাঠিয়েছেন অমিত শাহ। যা নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা তৈরি হয়েছে। জল্পনা ছড়িয়েছে যে মান ভাঙাতে দিলীপকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হবে। অথবা লোকসভা নির্বাচনের আগে দিলীপকে সাংগঠনিক বড় পদ দেওয়া হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এগুলির কী কোনও দরকার ছিল? দিলীপের সঙ্গে যে আচরণ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব করছেন, তা কী মেদিনীপুরের সাংসদের প্রাপ্য ছিল? লোকসভা নির্বাচনের আগে দিলীপ-অস্বস্তি কি কাটাতে পারবে বঙ্গ বিজেপি? এই সমস্ত প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।
২০১৯ সালের আগে রাজ্যে বিজেপি প্রাসঙ্গিক হয়নি। লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্য রাজনীতির ছবিটা পুরো বদলে যায়। দিলীপের হাত ধরে বাংলায় সাবালক হয় বিজেপি। যদিও একুশের নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। যদিও দিলীপ অনুগামীরা বলেন সেবার যদি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অত বেশি প্রচারে না আসতেন তাহলে ‘খেলাটা’ ঘুরে যেতে পারত। অর্থাৎ তাঁরা বলতে চান দিলীপের নেতৃত্বে রাজ্য নেতারাই যদি মূলত প্রচারের দায়িত্বে থাকতেন, তাহলে গেরুয়া শিবিরের ফল আরও ভাল হতো। তবে এটাও ঠিক বিজেপি হেরে গেলেও তারা ৩ থেকে ৭৭ আসনে পৌঁছে গিয়েছে। সেটাও কিন্তু কম কিছু নয়। এরপর দিলীপকে রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে সেখানে নিয়ে আসা হয়েছে বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে।
কিন্তু হাতে গরম বহু ইস্যু থাকলেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্যব্যাপী তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন সুকান্ত। তুলনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে অনেক বেশি আন্দোলন করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যেই দিলীপকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ থেকে সরানোটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বড় ভুল হয়েছে বলে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করেন। এতে দিলীপ অনুগামীরা কার্যত বসে গিয়েছেন। যে দিলীপের হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক মাটি পেয়েছে বিজেপি, তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই পদক্ষেপ একেবারেই মন থেকে নিতে পারছেন না রাজ্য বিজেপির একটা বড় অংশ। এই পরিস্থিতিতে দিলীপের মান ভাঙাতে উদ্যোগী হয়েছেন খোদ অমিত শাহ। সেটা কতটা সম্ভব হবে তা সময়ই বলবে।