dhupguri
কলকাতা: পঞ্চায়েত নির্বাচনে সীমাহীন সন্ত্রাসের কারণেই ফল ভাল হয়নি বলে দাবি বাম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের। সকলেরই অভিযোগ তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণেই সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচন হতে চলেছে। ঘটনা হল রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে বিস্তর টালবাহানা হয়েছে। এই অবস্থায় ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনে কড়া নিরাপত্তার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। এই বিধানসভায় বুথের সংখ্যা ২৬০। সেখানে ৩০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রায় তিন হাজার জওয়ানকে মোতায়েন করা হবে ওই বুথগুলিতে। প্রত্যেকটি বুথেই বেশ কয়েকজন করে সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশকর্মীরাও থাকবেন। এই পর্যাপ্ত সংখ্যক সশস্ত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় নির্বিঘ্নে ভোট হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে ধুপগুড়িতে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা মাত্র ৩৮টি। মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৪৮ হাজার। ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে গত নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন বিষ্ণুপদ রায়। তাঁর মৃত্যুতে এখানে উপনির্বাচন হচ্ছে। এবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন পুলওয়ামায় শহিদ জওয়ানের স্ত্রী তাপসী রায়। অন্যদিকে কংগ্রেসের সমর্থনে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভাওয়াইয়া সঙ্গীতশিল্পী সামাজিক ন্যায়বিচার মঞ্চের নেতা ঈশ্বরচন্দ্র রায়। আর তৃণমূল প্রার্থী করেছে ড. নির্মলচন্দ্র রায়কে। তিন প্রার্থীই রাজবংশী সমাজের প্রতিনিধি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে এই উপনির্বাচনে মূল লড়াইটা হতে চলেছে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সমর্থনে ভোটে লড়ে সিপিএম প্রার্থী ছয় শতাংশেরও কম ভোট পেয়েছিলেন। সেবার সাড়ে চার হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির বিষ্ণুপদ রায়। তাই ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রটি ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি।
এর আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কার্যত ‘ছেলেখেলা’ হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। আদালত কেন্দ্রীয় বাহিনীর নির্দেশ দিলেও রাজ্যের অধিকাংশ বুথে তাদের দেখা যায়নি বলে বিরোধীদের দাবি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন জেলায় জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। সেই জায়গা থেকে উপনির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলে সবারই বিশ্বাস। তাই এই উপনির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ানোটা বামেদের কাছে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের।
কংগ্রেসের সমর্থনে সেখানে জিতে যাবে বামেরা, এমনটা কেউ মনে করছেন না। তবে বামেরা দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসলে সেটাই নিঃসন্দেহে বড় চমক হবে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের মাটি বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে চিহ্নিত। তাই ধূপগুড়ি আসনটি ধরে রাখা বিজেপির প্রধান লক্ষ্য। আর তৃণমূলও এই উপনির্বাচনে জিতে রাজ্যে নিজেদের ভিত আরও শক্ত করতে চাইছে। এই আবহের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন প্রথম থেকেই যেভাবে বিপুল সংখ্যক বাহিনী পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে তাতে ধূপগুড়ি উপনির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাসের অভিযোগ না ওঠার সম্ভাবনাই বেশি। তাই প্রত্যাশা মাফিক সুষ্ঠু ভোট হলে শেষ পর্যন্ত কারা বাজিমাত করবে সেদিকেই চোখ থাকবে রাজনৈতিক মহলের।