চারদিকে ঢাকির বাদ্যি আর আলোর রোশনাই, কেমন অবস্থা বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের?

চারদিকে ঢাকির বাদ্যি আর আলোর রোশনাই, কেমন অবস্থা বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের?

dhakir

নিজস্ব প্রতিনিধি: তৃণমূল তখন বিরোধী দল। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার অভিযোগ করে বলতেন সিপিএম তথা বামেদের আমলে রাজ্যে ৫৮ হাজার কলকারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁরা রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরলে শিল্পায়ন হবে, অবস্থার পরিবর্তন হবে। এই প্রচার বহুবার করতে শোনা গিয়েছিল তৃণমূলের তৎকালীন শীর্ষ নেতৃত্বকে। এরপর রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। ১২ বছর হয়ে গেল ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। কিন্তু কোথায় কি! বড় মুখ করে বলার মতো নতুন নতুন কলকারখানা হওয়া তো দূরের কথা, তৃণমূল আমলেও রাজ্য জুড়ে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই গত সাড়ে চার দশকের ইতিহাস বলছে রাজ্যে কলকারখানা ধারাবাহিকভাবে বন্ধ হয়েছে। এই আবহের মধ্যে আরও একটা দুর্গাপূজো এসে চলে যাওয়ার মুখে। কিন্তু বন্ধ কলকারখানার শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের পরিস্থিতির কিন্তু বদল হল না। চারদিকে যখন ঢাকের বাদ্যি শোনা যাচ্ছে, আলোর রোশনাইয়ে চারদিক উদ্ভাসিত, তখন সেই সমস্ত পরিবারে আঁধার এবারেও কাটল না।

যেমন ধরা যাক হাওড়া, হুগলি বা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কথা। দু দশক আগেও এই সমস্ত এলাকা শ্রমিকদের ভিড়ে গমগম করত। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে শোনা যেত সেই সুপরিচিত ভোঁ-এর শব্দ। যে শব্দে বোঝা যেত ক’টা বাজে, অর্থাৎ পরের শিফট চালু হল বা কোনটা শেষ হল ইত্যাদি কারখানা সম্পর্কিত ব্যাপার। সেই সময় আশপাশের খাবার দোকানগুলিতে চোখে পড়ার মতো ভিড় হতো। মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন বিশ্বকর্মা পুজোর সময় বহু আগে থেকে অর্ডার না দিলে প্রয়োজন অনুযায়ী প্যাকেট সরবরাহ করতে পারতেন না তাঁরা। আসলে এত সংখ্যক অর্ডার আসত যে তাঁরা চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে পারতেন না। থানার সামনে বসে যেত কাপড়, জামা বিক্রির অস্থায়ী হাট। প্রচুর কেনাবেচা হতো দোকানিদের। আজ সবটাই অতীত। সেই সমস্ত অতীতের সোনাঝড়া দিনগুলি কবে যেন ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। পেটের তাগিদে বহুদিন ধরেই বন্ধ কলকারখানার শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বিকল্প কাজ বেছে নিয়েছেন। কেউ হকার পেশায় নাম লিখিয়েছেন, কেউ দোকান করেছেন,‌ কেউ আবার ছোটখাটো নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কোনও মতে সংসার চালাচ্ছেন তাঁরা। শখ আহ্লাদ তো দূরের কথা, রোজকার দু’বেলা আহার জোগাড় করতে যাচ্ছে অধিকাংশ পরিবার।

তাই এ বিষয়ে দায় অস্বীকার করতে পারে না পূর্বতন বাম সরকারের পাশাপাশি বর্তমান শাসক দল তৃণমূলও। যে তৃণমূল একটা সময় বন্ধ কলকারখানা নিয়ে সরব ছিল, এখন সেগুলি ধাপে ধাপে খোলার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া কি তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? ৩৪ বছরের বাম সরকারের আমলে যেভাবে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়েছে, তার জন্য তাদের ধিক্কার অবশ্যই প্রাপ্য। কিন্তু তৃণমূল ১২ বছরে কি করল? এ ব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট ভিশন  তারা কি সামনে আনতে পেরেছে? বন্ধ কলকারখানা খোলার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কি নীতি রয়েছে সেটা আজ পর্যন্ত  স্পষ্ট হয়নি। তাই দুর্গাপুজো তথা গোটা উৎসবের মরসুমে বন্ধ কারখানার কয়েক লক্ষ শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা কীভাবে যে দিন কাটাচ্ছেন তা চিন্তা করলেই মন খারাপ হয়ে যায়। এভাবেই কেটে গেল তেইশের দুর্গাপুজো। সামনের বছর কী অবস্থার পরিবর্তন হবে? সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বলছে তা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবু তাঁদের অবস্থার বদল ঘটুক, এটাই কাম্য। আগামী দিনে মা-মাটি-মানুষের সরকার এ ব্যাপারে নতুন কোনও দিশা দেখাতে পারে কিনা তা নিয়ে কৌতূহল থেকেই গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + 2 =