দেউচা-পাঁচামি প্রকল্প: প্রশ্ন তুললেন সিপিএম নেতা

দেউচা-পাঁচামি প্রকল্প: প্রশ্ন তুললেন সিপিএম নেতা

কলকাতা: রাজ্য সরকারের খোলামুখ কয়লা খনি দেউচা, পাঁচামি প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রাক্তন বিধায়ক এবং পশ্চিম বর্ধমানের সিপিএম নেতা গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। নিজের ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “এ এক ধ্বংসাত্মক নীতি রাজ্য সরকার নিতে চলেছে। এখানে যে কয়লা ব্লক থেকে কয়লা উৎপাদন হবে তার ফলে আগামী ৩০বছরের মধ্যে দুবরাজপুর থেকে সিউড়ি এবং ইলামবাজার এলাকার পরিবেশের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এই বিশাল এলাকা আগামী দিনে মরুভূমিতে পরিণত হবে। খোলামুখ খনির ফলে জমির উর্বরতা ধ্বংস হবে। এখানের মাটিতে চাষ আবাদ হবে না।”

গৌরাঙ্গবাবু লিখেছেন, “অনেকেই জানেন কিনা জানি না, ভুস্তরের একেবারে ওপরের যে মাটিতে গাছ পালা এবং চাষ আবাদ হয় সেই মাটির এক মিটার মাটি তৈরি হতে ন্যূনতম সময় লাগে ১০০০০ বছর। এখন খোলামুখ খনি করার সময় লক্ষ লক্ষ বছরের কয়েকশ মিটার নিচের মাটি ওপরে চলে আসবে। আর ওপরের আবাদযোগ্য মাটি নিচে চলে যাবে। বসুন্ধরা বন্ধ্যা হবে। হাজার হাজার মানুষ এলাকার বসতবাটি থেকে উচ্ছেদ হবে। ওরা কিছু টাকা দিয়ে ভাবছে এই কাজ করবে। হয়ত আমরা থাকব না, খোলামুখ কয়লা খনির কল্যাণে একসময় আসানসোল থেকে সিউড়ি পর্যন্ত শুধুই মাটির ঢিপি আর বড় বড় হ্রদ থাকবে। মানুষ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে কয়েক শত স্কোয়ার কিলোমিটার এলাকা।”

পশ্চিমবঙ্গের শেষ বামফ্রন্ট সরকার সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামে শিল্পায়ন নিয়ে জনরোষের মুখে পড়েছে। বাম সরকারের পতনের মূল কারণ হিসেবে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামকে প্রথম লাইনে লেখা হয়। অন্যদিকে, ১০ বছর ক্ষমতায় থেকেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ভারী শিল্প আনতে পারেননি, এমন আলোচনাও বিস্তর চলে। দেউচা, পাঁচমি নিয়ে তৃণমূল সরকারের প্রচারের মুখে সিপিএম নেতার এই ‘কাউন্টার এট্যাক’ শিল্পায়ন নিয়ে নতুন বিতর্ক বা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

তিনি লিখেছেন, “মনে রাখা দরকার বাম সময়কালে অন্ডালে কাজী নজরুল বিমানবন্দর ৩৫০০ একর, অন্ডাল ভিভিসি ১০০০ একর, পানাগড় শিল্পতালুক ৩৫০০একর এবং রাণীগঞ্জ, জামুরিয়া, এবং সালানপুর বারাবনি ব্লকে ৬০০০ একর অর্থাৎ শুধুমাত্র অবিভক্ত বর্ধমান জেলাতেই মোট ১৪০০০ একর এলাকাতেই বিরাট বিরাট শিল্প মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে পানাগড় শিল্পতালুকে অধিগৃহীত জমির ফাঁকা ১৫০০ একর জমিতে তৃণমুল সরকার একটা বিড়ি কারখানাও করতে পারল না। হ্যাঁ, তৃণমূলের ধ্বাংত্মক নীতির ফলে সিঙ্গুর হল না। কিন্ত এর বিরুদ্ধে লড়ে বর্ধমানের এই বিশাল শিল্পতালুক যেভাবে রাজ্য, জেলা, এবং দেশের উন্নয়নে ভুমিকা পালন করছে তা অভাবনীয়।”

গৌরাঙ্গবাবু মনে করছেন, “তাহলে কি কয়লার দরকার নেই? অবশ্যই আছে। তারজন্য যে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা, জমিকে পুনর্ব্যবহারের পরিকল্পনা, কয়লা তোলার পর ঐ জমিকে আবার ব্যবহারযোগ্য করে তোলার পরিকল্পনা, এসব নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী? তা সরকারকে জানাতে হবে। ভুমিহারা যাদের চাকরি হবে সে চাকরির ধরণ কী? সামাজিক কোনো সুরক্ষা থাকবে কিনা, বেতন কত? সব জানাতে হবে। পরিবেশ যেসব গাছপালা ধ্বংস হবে, সেসবের জন্য বনসৃজন কোথায় হবে — এবং এখন যে গাছগুলো আছে সেই ধরণের বনজ সম্পদ থাকবে কিনা তার জন্য কী পরিকল্পনা, তা জানাতে হবে। খাল, বিল, ঝর্ণা, অজয় ও অন্যান্য ছোট বড় নদীগুলোর গতিপথের কী হবে? জীববৈচিত্র্য যা ধ্বংস হবে তা রক্ষার পরিকল্পনা কী তা জানাতে হবে? মন্দির, মসজিদ, গির্জা, হাসপাতাল— এ সবের কী হবে? এসব নানাবিধ বিষয় আছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × one =