অমিত শাহের ৭ ‘ভুয়ো’‌ অভিযোগ শুধরে দিলেন ডেরেক ও সুব্রত!

কলকাতা: রাজ্য সফরে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও শাসক দলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ। বাংলার মানুষকে একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অভিযোগগুলির বেশিরভাগই মিথ্যা বলে পাল্টা দিলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’‌ব্রায়েন। রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ভুল তথ্য শুধরে দিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। টুইটারে সঠিক তথ্য‌ তুলে ধরেছেন তাঁরা।

কলকাতা: রাজ্য সফরে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও শাসক দলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ। বাংলার মানুষকে একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অভিযোগগুলির বেশিরভাগই মিথ্যা বলে পাল্টা দিলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’‌ব্রায়েন। রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ভুল তথ্য শুধরে দিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। টুইটারে সঠিক তথ্য‌ তুলে ধরেছেন তাঁরা।

ডেরেক অভিযোগ তুলেছেন, বক্তৃতায় সাতটি ভুল তথ্য দিয়েছেন অমিত শাহ। এর মধ্যে প্রথমেই ডেরেক ও’‌ব্রায়েন ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে অমিত শাহের মিথ্যে অভিযোগের কথা। অমিত শাহ বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য দলের জন্য কংগ্রেস ছেড়েছিলেন। যেখানে তিনি নিজে দলবদল করেছেন সেখানে দলত্যাগের জন্য অন্যদের আক্রমণ করছেন তিনি।‌ ডেরেক ও সুব্রত জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনওদিন দলবদল করেননি। তিনি ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন। তারপর একটি নতুন দল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “দেশের প্রধানমন্ত্রীর পরই যাঁর স্থান, তিনিই যদি এমন কথা বলেন তা হলে আমরা মর্মাহত হই।”

অমিত শাহ আরও বলেন, ‘‌আয়ুষ্মান ভারত’‌ থেকে রাজ্যবাসীকে বঞ্চিত করছে তৃণমূল।‌ কিন্তু ডেরেক ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‌আয়ুষ্মান ভারত’‌ প্রকল্পর দু’‌বছর আগেই বাংলায় ‘‌স্বাস্থ্যসাথী’‌ প্রকল্প শুরু হয়েছিল। ‘‌স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে রাজ্যে ১.‌৪ কোটি পরিবার বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবীমার সুযোগ পাচ্ছে। অমিত শাহের আরও অভিযোগ, কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘পিএম কিসান’‌ থেকে কৃষকদের বঞ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের দাবি, ‘‌কৃষক বন্ধু’‌ প্রকল্পের আওতায় বাংলার কৃষকরা একর প্রতি বার্ষিক ৫ হাজার টাকা সহায়তা পান। কিন্তু ‘‌পিএম কিসান’‌-এ একর প্রতি মাত্র ১২১৪ টাকা দেয় কেন্দ্র সরকার। এর পাশাপাশি ‘‌শস্যবিমা’ প্রকল্পেও কৃষকদের হয়ে সম্পূর্ণ প্রিমিয়াম দেওয়া হয় এই রাজ্যে। কৃষকদের থেকে এক টাকাও এক্ষেত্রে নেওয়া হয় না। কিন্তু কেন্দ্রের ‘‌পিএমএফবিওয়াই’‌ প্রকল্পে প্রিমিয়ামের একাংশ কৃষকদের থেকে নেওয়া হয়।

অমিত শাহ এমনও দাবি করেছেন, গত দেড় বছরে ৩০০ বিজেপি কর্মী নিহত হয়েছেন।‌এর পরিপ্রেক্ষিতে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এই বক্তব্য যথেষ্টই হাস্যকর। তাঁর দাবি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই বিজেপি কর্মীদের মৃত্যু হয়েছে। এমনকী আত্মহত্যাকেও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে চালানো হয়েছে। ভুল পরিসংখ্যান দিয়ে মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বিজেপির ১১৬ জন লোকসভার সাংসদের বিরুদ্ধে অপারধমূলক রেকর্ড রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অমিত শাহের আরও অভিযোগ, বাংলার মানুষের জন্য খাদ্যশস্য পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে। কিন্তু তৃণমূলের কর্মীরা সেগুলো আত্মস্যাৎ করেছেন। কিন্তু‌ তৃণমূলের উত্তর, বাংলার ‘‌খাদ্যসাথী’‌ কর্মসূচির আওতায় পরের বছর জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে রাজ্য সরকার। ‌ভারতের ইতিহাসে এটা রেকর্ড। কোনও রাজ্যে এই ঘটনা ঘটেনি।‌

এদিন অম্ত শাহ বলেন, জে পি নাড্ডাকে সফরের সময় পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। অভিযোগ অস্বীকার করে ডেরেক ও সুব্রত জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার জে পি নাড্ডার জন্য ‘‌জেড প্লাস’‌ সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু অনেকগুলি গাড়ির কনভয় তাঁকে অনুসরণ করছিল। ফলে সমস্যা তৈরি হয়। অমিত শাহ বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, ‌নরেন্দ্র মোদী বাংলার গরিব মানুষদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তৃণমূলের তরফে জানানো হয়, একটা বাড়ি তৈরি করতে কেন্দ্র ৬০ শতাংশ ও রাজ্য সরকার ৪০ শতাংশ টাকা দেয়। ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে রাজ্য সরকার ৩৯ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা ব্যয় করে ৩৩ লক্ষ ৮৭ হাজার বাড়ি নির্মাণ করেছে। এছাড়া ‘‌গীতাঞ্জলি’‌ প্রকল্পের অধীনে ৩৫৫০ কোটি টাকা খরচ করে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। ‘‌সবার জন্য বাড়ি’ প্রকল্পে ৪ লক্ষ ৩০ হাজার বাড়ি তৈরি করেছে রাজ্য। এর জন্য খরচ হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। এরপরই সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‌আশা করি, অমিত শাহ তাঁর পরবর্তী সভায় নিজের ভুল শুধরে মানুষের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরবেন।’‌

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *