কলকাতা: গরমের ছুটি-সহ করোনার প্রভাবে টানা ৮৬ দিন বন্ধ স্কুল-কলেজ৷ আগামী ১০ জুন পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু, স্কুল বন্ধ থাকলেও মিড ডে মিল ব্যবস্থা যাতে সচল থাকে, তা নিশ্চিত করতে দ্বিতীয় দফায় স্কুল শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও স্কুল খুলে চাল-আলু বিতরণে সরকারি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে৷ কিন্তু, সেই নির্দেশিকা ঘিরে নানান প্রশ্ন, উদ্বেগ কাজ করছে শিক্ষক মহলে৷ সমস্যা এড়াতে সরকারি উদ্যোগে গোটা প্রক্রিয়া শেষ করার দাবিও উঠছে শিক্ষক মহলে৷ একই সঙ্গে পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ মাথাপিছু ৩ কেজি করে চাল ও আলুর পরিবর্তে আগামী দেড়ে মাসের জন্য ৯ কেজি চাল, আলু, সয়াবিন, ডাল ও ডিম দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে৷
দ্বিতীয় দফায় মিড ডে মিলে চাল-আলু বিতরণের দায়িত্ব কেন স্থানীয় পঞ্চায়েত বা পুরসভা নেবে না? এই কাজের জন্য স্কুলে পর্যাপ্ত মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের জোগান দেওয়া হবে তো? সরকারি নির্দেশ কেন তা পরিষ্কার উল্লেখ করা নেই? গোটা বিষয়টি স্পষ্ট করে নির্দেশ দেওয়ারও দাবি উঠেছে শিক্ষক মহলের একাংশে৷ লকডাউন পরিস্থিতিতে রাজ্যে বিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় দফায় মিড ডে মিলে চাল-আলু বিতরণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হলেও পদ্ধতি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে শিক্ষক মহলে৷ গোটা বিষয়টি প্রশাসনের নজরাদিতে করারও দাবি উঠছে৷
এবিষয়ে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদককিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, ‘‘ছাত্র-ছাত্রীদের বহু পরিবার সংকটের মধ্যে রয়েছে৷ এই সংকটের সময় তাদের বাড়িতে মিড ডে মিলের বরাদ্দ হিসাবে চাল-আলু বিতরণ অত্যন্ত প্রয়োজন৷ আবার এক সঙ্গে বহু মানুষের জমায়েত বিপদ ডেকে আনতে পারে৷ প্রয়োজনে প্রশাসনিক ভাবে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে অভিভাবকদের বাড়ি বাড়ি চাল ও আলু বিতরণ করা যায় কি না ভেবে দেখা হোক৷ তা না হলে আমরা মনে করি এই অবস্থায় বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি পালন করতে গেলে বিদ্যালয়ের কেবল কাছাকাছি শিক্ষকদের উপস্থিতিতে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে তা করতে হবে৷ শিক্ষকরা দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত৷’’
তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘গতবারের তিক্ত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রাজ্য সরকার ও শিক্ষা দপ্তরের কাছে আমাদের অনুরোধ, অভিভাবকদের কাছে চাল-আলু পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের মাধ্যমে তা কার্যকরী করতে গেলে স্বভাবতই অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা হাজির হয়ে যেতে পারে৷ তাছাড়া বহু অভিভাবক একসাথে বিদ্যালয় হাজির হবেন৷ এর জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর কোনভাবেই দায় চাপানো উচিত নয়৷ কেননা, গতবার দুটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শাস্তিমুলক বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ কোনও ভাবেই যাতে ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি বা অভিভাবকদের একসাথে জমায়েত যাতে না হয় তার জন্য প্রশাসন উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুক৷ শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ দায়িত্বজ্ঞানহীন নন৷ কিন্তু বিদ্যালয়ের কাছাকাছি যেসব শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকেন এই মুহূর্তে তাঁরা ছাড়া অন্যদের কারও পক্ষে বিদ্যালয় পৌঁছানো সম্ভব নয়৷ দয়া করে এই কয়েক জনের উপর সমস্ত দায় চাপিয়ে দেবেন না৷ একসঙ্গে যাতে অনেক মানুষের জমায়েত না হয় তা নিশ্চিত করবার জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে সাহায্য করা হোক৷’’মিড ডে মিলের জন্য ছাত্র পিছু চাল বাদ দিয়ে মাসে প্রায় ১০০ টাকার বেশি ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে৷ তাহলে চালের সঙ্গে মাত্র দু’কেজি করে আলু কেন? বরাদ্দ বাকি অর্থেও খাদ্য দ্রব্য সামগ্রী দেওয়া হোক বলেও দাবি জানিয়েছেন তিনি৷
পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ মাথাপিছু ৩ কেজি করে চাল ও আলুর পরিবর্তে আগামী দেড়ে মাসের জন্য ৯ কেজি চাল, আলু, সয়াবিন, ডাল ও ডিম দেওয়ারও দাবি জানিয়ে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা জানিয়েছেন, ‘‘মিড-ডে মিলে মাসে মাথাপিছু ব্যয় গড়ে ১০০টাকা৷ সেখানে কেবলমাত্র ২ কেজি আলু অর্থাৎ ৪০টাকা বরাদ্দ কেন? পাশাপাশি স্কুল বন্ধ থাকায় মিড-ডে মিল কর্মীদের ভাতা দেওয়া হয়নি৷ যা চরম অমানবিক৷ এই চূড়ান্ত সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে মিড-ডে মিল কর্মীদের বিশেষ ভাতা প্রদান ও ছাত্রছাত্রীদের আগামী দেড়মাসের জন্য ৯ কেজি করে চাল, আলু-সহ ডাল, ডিম সয়াবিন ইত্যাদি বিলির ব্যবস্থা করা হোক৷’’