ফিরিয়ে দিয়েছে এনআরএস! বাড়িতেই প্রসব, সদ্যোজাতের মৃত্যু

ফিরিয়ে দিয়েছে এনআরএস! বাড়িতেই প্রসব, সদ্যোজাতের মৃত্যু

b40bf97ad9485a3ad604816f59ac9ecb

হাওড়া: করোনা মোকাবিলায় নিবেদিত প্রাণ স্বাস্থ্য কর্মীরা নিজের এলাকা বা ভাড়া বাড়ির মালিকের কাছে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। কিন্তু শনিবার কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালের যে চিত্রটা দেখা গেল তা একেবারেই উল্টো। খোদ চিকিৎসকদের হাতেই নির্মম হয়রানির শিকার হতে হল আসন্নপ্রসবা এক প্রসূতিকে।  একেই তিনি করোনা রেড জোন হাওড়ার বাসিন্দা।  তারওপর হাসপাতাল থেকেও করোনা সংক্রামন ছড়াতে পারে এমন নানান অজুহাতে ফিরিয়ে দেওয়া হল ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে। অগত্যা বাড়ি ফিরে আসতে হল তাঁকে। কিন্তু ফিরে এসেই  নিজের বাড়ির  শৌচাগারে প্রসব হয়ে যায় তাঁর। যদিও সদ্যোজাত সেই পুত্রসন্তানকে বাঁচানো যায়নি।

আনন্দবাজার পত্রিকা সূত্রে খবর,  শুক্রবার রাত থেকেই তরুণীর প্রসব-যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর। অভিযোগ, তখন থেকেই একেরপর এক বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে ভর্তি করা যায়নি। এরপর বাধ্য হয়েই এনআরএসের দ্বারস্থ হয় তাঁর পরিবার। কিন্তু সেখানে কিছুদিন আগেই এক প্রসূতির দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে সেখানকার প্রসূতি বিভাগ। কিন্তু এই তরুণীর অবস্থা দেখেও চিকিৎসকরা কোনো ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরস্ত তাঁকে ভর্তি নিতে সরাসরি নাকচ করে দেন। কোনো অনুনয় বিনয়ে কাজ হয়নি।

শুধু তাই নয় অন্য একটি বাংলা পোর্টালে প্রকাশিত প্রতিবেদন, প্রসূতির পরিবারের দাবি স্ত্রীরোগের জরুরী বিভাগের দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসক সাদা কাগজে লিখে সই করে দিতে বলেন যে, রোগী এবং তার সন্তানের কোনো সংক্রামণ হলে হাসপাতালের কোনো দায় থাকবেনা। কেউ কেউ বলেছেন হাওড়া রেড জোন তাই কোনো ঝুঁকি নেওয়া যাবেনা। এমনকি ওই হাসপাতালে তাঁকে করোনা পজ়িটিভ রোগীর সঙ্গে থাকতে হবে বলে ভয়ও দেখান চিকিৎসকরা। যন্ত্রনায় কাতর তরুণীর পরিবারের সঙ্গে এনিয়ে প্রায় বেশ কিছুক্ষণ ধরে বাকবিতণ্ডা চলে। পরিবারের তরফে জানা গেছে, কয়েকজন চিকিৎসক যদিওবা সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু বেশিরভাগ চিকিৎসকের আপত্তি থাকায় প্রসূতিকে ভর্তি করা যায়নি। আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রসূতি জানিয়েছেন, তিনি নিজেও স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গেই যুক্ত। কিন্তু চিকিৎসকরা যে এতটা দুর্ব্যবহার করতে পারেন ভাবতেও পারেননি তিনি।

ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সেই সময় কর্মরত চিকিৎসকদের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছেন অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়। অন্যদিকে, রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা চিকিৎসক শান্তনু সেন জানিয়েছেন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লকডাউনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে রোগীকে ফেরানো যাবেনা বলে কঠোরভাবে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তার পরেও যন্ত্রনায় কাতর এক আসন্নপ্রসবাকে এভাবে হেনস্থা হতে হল চিকিৎসকদের হাতেই। একটা হাসপাতালের এতজন চিকিৎসক মিলে কোনো রকম বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারলেন না। প্রশ্ন উঠছে জরুরী পরিষেবা নিয়ে, চিকিৎসকদের কর্তব্য তথা মানবিক তার নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *