শনিবার রাতেই তৈরি হয়ে যাবে ‘রেমাল’! কতটা তাণ্ডব বাংলায়?

কলকাতা: চোখ রাঙাচ্ছে ‘রেমাল’৷ ফুঁসছে সাগর৷ কবে, কোথায় আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়? লন্ডভন্ড হবে কি দক্ষিণবঙ্গ? কী বলছে হাওয়া অফিস? আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত…

Tropical cyclone Remal

কলকাতা: চোখ রাঙাচ্ছে ‘রেমাল’৷ ফুঁসছে সাগর৷ কবে, কোথায় আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়? লন্ডভন্ড হবে কি দক্ষিণবঙ্গ? কী বলছে হাওয়া অফিস?

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে শনিবারই ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেবে। সাগরের বুকে তৈরি হয়ে যাবে ‘রেমাল’৷ সম্ভবত রবিবার গভীর রাতে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ল্যান্ডফল করবে এই ঘূর্ণিঝড়৷

 

এই মুহূর্তে ঠিক কোথায় নিম্নচাপের অবস্থান?

আলিপুর হাওয়া অফিসের রিপোর্ট অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপের রূপ নিয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। গত ছ’ঘণ্টায় এর গতিবিধি ধরা পড়েছে উপগ্রহ চিত্রে৷ দেখা গিয়েছে, গত ছয় ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে এসেছে নিম্নচাপ। বর্তমানে সাগর দ্বীপ থেকে ৩৮০ কিলোমিটার এবং ক্যানিং থেকে ৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এর অবস্থান৷

 

আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরছে গভীর নিম্নচাপ। শনিবার সন্ধ্যায় এই নিম্নচাপ থেকেই তৈরি হবে ঘূর্ণিঝড়। তারপর সাগরেইর উপরেই শক্তি বাড়িয়ে ‘দানব’-এর রূপ নেবে। আরও উত্তরে সরে এসে রবিবার রাতে বাংলাদেশের খেপুপাড়া এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়বে এই প্রবল ঘূর্ণি হাওয়া। স্থলভাগে প্রবেশের সময়ে ‘রেমাল’-এর গতি থাকবে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। ১৩৫ কিলোমিটার বেগেও হাওয়া বইতে পারে৷

 

এই ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপটায় ভিজবে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব কটি জেলা৷ কোথাও কোথাওভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর৷ শনিবার আবহাওয়ার বিশেষ পরিবর্কন না হলেও, রবিবার এবং সোমবার প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এই দু’দিন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় লাল সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হবে৷ ২০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই দুই জেলার উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া৷ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতেও সোমবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত চলবে। ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হতে পার বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে বইবে ঝোড়ো হাওয়া৷ কোথাও কোথাও ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগেও ঝড় হবে।

২৮ তারিখ দক্ষিণবঙ্গে আবার খুব একটা বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। ওই দিন উত্তরবঙ্গের উপরের পাঁচটি জেলা দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। জরি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। তৈরি রয়েছে রাজ্য প্রশাসন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নবান্নে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। এ ব্যাপারে প্রতিটি জেলাতে, বিশেষ করে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতেও কন্ট্রোল রুম খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে৷ প্রস্তুত রাখা হয়েছে ত্রাণ৷ তৈরি ফ্লাড শেল্টারগুলিও। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ পর্যটকদের গতিবিধির উপরেও নজর রাখা হচ্ছে৷

ঘণ্টায় ১৩০ কিমি বেগে ঝড় হলে বিভিন্ন এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিদ্যুতের খুঁটি৷ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে বিদ্যুৎ। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা-সহ বাকি দফতরকে আগে থেকেই তৈরি থাকতে বলা হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *