কলকাতা: রাজ্যে কর্মসংস্থানের অবস্থা যে সঙ্গীন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ একাধিক ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কর্মপ্রার্থীদের দুর্দশা৷ তবুও, রাজ্য সরকারের দাবি, বাংলায় বেকারত্ব কমেছে ৪০ শতাংশ৷ মূল্যায়ন সংস্থার সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমির (CMIE) গত মে মাসে রিপোর্টে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার ১৭.৪১ শতাংশ, দেশে তা ২৩.৪৮ শতাংশ৷ বেকারত্বের পরিসংখ্যান নিয়ে চর্চা-বিতর্কের মধ্যে এসএসসি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ফাঁপড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য।
সম্প্রতি দেবাংশুর ফেসবুক পেজে বেশ কিছু প্রশ্নের ঝটিতি জবাব দিতে বসেন তিনি৷ বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি৷ সেখানেই সোহেল রানা নামে এক ব্যক্তি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘এসএসসি কবে হবে ভাই? বুড়ো হয়ে গেলাম তো৷’’ এর উত্তরে দেবাংশু বলেন, ‘‘বুড়ো যদি হয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে আপাতত বার্ধক্যভাতার জন্য আবেদন করতে পারেন৷ এটুকুই বলতে পারি৷ যাক, Jokes Apart!’’ এই ভিডিয়োটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে৷ দেবাংশুর এই উত্তরে বেজায় ক্ষিপ্ত চাকরি প্রার্থীরা৷
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেবাংশুর এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়েছে তাঁরা। উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়৷ তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘ ৬ বছর ধরে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ৷ করোনা পরিস্থিতিতে অন্য চাকরির পরীক্ষাও স্থগিত। এই অবস্থায় রাজ্যের শাসক দলের একজন মুখপাত্র হয়ে কী ভাবে এতো অমানবিক কথা বলতে পারলেন দেবাংশু? অনেকে লিখেছেন, “তোমার এই বক্তব্য পছন্দ হল না, যেটা যুব সমাজের কাছে খুবই দুঃখজনক৷’’
করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যে বেকারত্বের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে৷ পরিস্থিতি এতটাই শোচবীয় যে অষ্টম শ্রেণি পাশের পরীক্ষাতে আবেদন জানাচ্ছে পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা৷ যেমন কিছু দিন আগেই প্রকাশিত হয়েছিল রাজ্যের বন দফতরে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি। চুক্তিভিত্তিক সেই পদের জন্য ২০ লক্ষেরও বেশি যুবক যুবতী আবেদন করেন। এই পরীক্ষার জন্য অষ্টম শ্রেণি পাশের যোগ্যতা প্রয়োজন হলেও, সেই পদের জন্য আবেদন পিএইচডি ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরাও আবেদন করেছেন বলে সূত্রের খবর। এর থেকেই স্পষ্ট এ রাজ্যের বেকারত্বে হাল৷ তার উপর করোনা কারণে ৩৫টির বেশি নিয়োগ পরীক্ষা অনির্দিষ্টকাল স্থগিত রেখেছে পিএসসি৷ নবান্নের তরফেও জোড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর বা পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত অর্থ দফতরের অনুমতি ছাড়া কোনও নিয়োগ হবে না৷ ফলে, তাতেও বেড়েছে উদ্বেগ৷ অন্যদিকে, শিক্ষক নিয়োগে বেপরোয়া অনিময়ের জেরে কলকাতা হাইকোর্টে ঝুলে রয়েছে ১৫০০ বেশি মামলা৷ শিক্ষক নিয়োগে জোড়া স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট৷ উচ্চ প্রাথমিকের পাশাপাশি প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ কবে হবে, তার কোনও সন্ধান এখনও মেলেনি৷ টেটের আবেদন জমা দেওয়ার ২-৩ বছর পরও পরীক্ষা ও শূন্যপদের তথ্য দিতে পারেনি রাজ্য সরকার৷ এই নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে বিদ্রোহ ছিলই, এবার সেই বিদ্রোহে ঘৃতাহুতি দিলেন তৃণমূলের তরুণ নেতা৷
আরও পড়ুন- বিশ্বভারতীতে লজ্জার তাণ্ডব, তৃণমূল বিধায়ক-সহ ১২ জনের নামে FIR
আরও পড়ুন- তৃণমূলকে তাড়াতে হোম-যজ্ঞ, মাথা মুড়িয়ে ফেললেন বিজেপি সাংসদ
আরও পড়ুন- মহিলাদের পদোন্নতি, যৌনকর্মীদের জন্য বিশেষ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর