কলকাতা: যাদবপুর কাণ্ড নিয়ে এখন হইচই গোটা রাজ্যে। র্যাগিংয়ের জন্য ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলেই অভিযোগ উঠেছে, হয়েছে গ্রেফতারিও। কিন্তু না চাইলেও মানতে হবে যে, এমন ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেও এমন ধরনের ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে ছাত্রছাত্রীর। এমনই এক ঘটনায় নিম্ন আদালতে বিচারক প্রক্রিয়ার ওপর ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। হস্টেলের পাঁচতলা থেকে পড়ে ছাত্রীর রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় এই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মালদার কালিয়াচকের এক ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল তা উত্তর আজও মেলেনি। তবে সেই ঘটনার সঙ্গে যাদবপুরের ঘটনার অনেক মিল আছে। ঘটনার দিন ওই ছাত্রীর বাবার সঙ্গে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে হস্টেল কর্তৃপক্ষ তাকে বাড়ি যেতে বাধা দেয়। সেই রাতেই তার মৃত্যু হয়। মেয়ের সেই রহস্য মৃত্যুর সুবিচার আজও পাননি হতভাগ্য বাবা। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের আইনজীবী শাশ্বত গোপাল মুখোপাধ্যায় আদালতে জানান, নাবালিকা ছাত্রী মানসিক অবসাদের জন্য আত্মহত্যা করেছে। তাই কোনও নিরপেক্ষ অথবা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের প্রয়োজন নেই। তিনি আরও দাবি করেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীর অভিভাবককে স্কুলে ডেকে পাঠানোর পরেই সে আত্মহত্যা করে। কোনও খুনের অভিযোগ না থাকায় পুলিশের কাছে মামলাও দায়ের হয়নি।
তবে আদালত জানতে চায়, কী কারণে ওই ছাত্রীর অভিভাবককে স্কুলে ডাকা হয়েছিল তার তথ্য কোথায়? একই সঙ্গে বিচারপতির প্রশ্ন, প্রথম চার্জশিট জমা করার সময় যে সমস্ত ব্যক্তিদের সাক্ষী নেওয়ার দরকার ছিল তাদের কেন সাক্ষী নিলেন না তদন্তকারী আধিকারিকরা? এই প্রশ্নগুলির উত্তর এদিন আদালতে দিতে পারেননি সরকার পক্ষের আইনজীবী। এদিকে মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী বলেন, নাবালিকা ছাত্রীর বাবা নির্দিষ্ট করে খুনের অভিযোগ করলেও সেই অভিযোগ এফআইআর হিসেবে রুজু করেনি পুলিশ। পাশাপাশি ওই ছাত্রী পাঁচ তলা থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার পর যে হাসপাতালে প্রথম তার চিকিৎসা হয়েছিল, সেই চিকিৎসকের কোনও সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ঘটনার প্রায় এক দশক হতে চললেও আজ পর্যন্ত মৃত ছাত্রীর বাবার কোনও রকম জবানবন্দি নেয়নি পুলিশ বলে দাবি তাঁর।
আইনজীবীর আরও বক্তব্য, ঘটনার আগের দিন ছাত্রীর বাবা স্কুলে দেখা করতে যায় দিদি এবং তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে। ছেলে এবং মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য আবাসিক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আবাসিক কর্তৃপক্ষ তার ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলেও মেয়েকে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে আটকে দেয় এবং সেই রাতেই এই ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনায় পরিবারের দাবি, মেয়ের দেহের কোনও অংশেই আঘাতের চিহ্ন ছিল না পাশাপাশি হাড়ে কোনও আঘাত লাগেনি। অভিযোগ, তাঁদের মেয়েকে পরিকল্পনা করে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর মালদহ কালিয়াচক আবাসিক মিশনের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী নাজিমা খাতুন হস্টেলের পাঁচতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্নহত্যা করে বলে দাবি করে কর্তৃপক্ষ।