প্রেমের সুবর্ণ জয়ন্তী! বিয়ের ৫০ বছরে ধুমধাম করে শ্বশুর-শাশুড়ির বিয়ে দিলেন পুত্রবধূ

প্রেমের সুবর্ণ জয়ন্তী! বিয়ের ৫০ বছরে ধুমধাম করে শ্বশুর-শাশুড়ির বিয়ে দিলেন পুত্রবধূ

বাঁকুড়া:  ধারাবাহিক থেকে বাস্তব জীবনে, ঘরে ঘরে যেন চলছে শাশুড়ি-বৌমার অঘোষিত যুদ্ধ৷ ঝগড়া-ঝাটির পর্ব ছাড়িয়ে কখনও উঠে আসে বধূ নির্যাতনের খবর৷ কখনও আবার বৌমা’র অত্যাচারে বৃদ্ধ শশুর-শাশুড়ির ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে৷  গতে বাঁধা সেই ছবি ভেঙে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ইন্দাসের বৌমা৷ হ্যাঁ, শশুর-শাশুড়ির জন্য তিনি যা করলেন, অনেকে তা কল্পনাও করতে পারেন না৷ 

আরও পড়ুন- ৭৫ পেরিয়েও ফিট, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সোনা জিতে তাক লাগালেন কালনা স্কুলের দিদিমণি

বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার অন্তর্গত মেরাল গ্রাম৷ সেই গ্রামেরই বাসিন্দা নির্মেলেন্দু মাঝি এবং কাননবালা মাঝি। দুই ছেলে, এক মেয়ে বৌমা, জামাই, নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার তাঁদের৷ কর্মসূত্রে দুই ছেলেই বাইরে থাকে৷ মেয়ে থাকে শ্বশুরবাড়িতে৷ ফলে সব সময় দেখা সাক্ষাৎ হয় না তাঁদের৷ কিন্তু তা বলে তাঁরা এক মুহূর্তেও জন্যেও ভোলেননি তাঁদের বাবা-মা’র কথা৷ প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তাঁদের শুভেচ্ছা জানান সময় করে৷ আর এবার তো তাঁদের ৫০তম বিবাহ বার্ষিকী বলে কথা৷ তা কী ভোলা যায়? 

প্রতি বছর এই দিনটাতে সোশ্যাল মিডিয়া বা ফোনেই বাবা-মা’কে শুভেচ্ছা জানান তাঁদের সন্তানরা৷ তবে এই বছরটা নিশ্চিত ভাবেই স্পেশ্যাল৷ এক সঙ্গে পথচলার সুবর্ণজয়ন্তী তাঁদের৷ তাই সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেন বাবা-মাকে দারুণ একটা সারপ্রাইজ দেবেন।  আর এই বিষয়ে সম্পূর্ণ উদ্যোগ নেন পুত্রবধূ অর্পিতা মাঝি। 

দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে ৫০ টা বসন্ত৷ সুখে দুখে কেটেছে তাঁদের দাম্পত্য জীবন৷ কী ভাবে এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল তা যেন বুঝতেই পারেননি  বছর ৭৮ এর  নির্মেলেন্দু মাঝি এবং ৬৬ বছরের কাননবালা মাঝি। একসাথে কত মান অভিমান কাটিয়ে অতিক্রান্ত করেছেন বিবাহিত জীবনের ৫০ বছর। প্রেমের সুবর্ণ জয়ন্তীতে তাঁদের ভালোবাসাকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিলেন ছেলে, মেয়ে, বৌমা, নাতি- নাতনিরা৷ এমনকী এই উৎসবে সামিল হন তাঁর নাত বউরাও। গোটা পরিবার ঠিক করে ৫০ বছর আগে যেভাবে সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন নির্মেলেন্দু বাবু এবং কানন বালা, চার চেয়েও জাঁকজমকভাবে তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান পালন করা হবে৷ একেবারে অনুষ্ঠান করে অতিথিদের  সঙ্গে নিয়ে বিয়ে দেওয়া হবে তাঁদের। তবে গোটা পরিকল্পনার কথা ঘুণাক্ষরেও জানতে দেননি বাবা-মাকে৷ 

প্রথমবার কথাটা জানার পর অবশ্য অস্বস্তিতে পড়েছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি৷ এক বিয়েতেই রক্ষে নেই তার উপর আবার দ্বিতীয়বার বিয়ে! ছেলে-বৌমার উপর রীতিমতো রাগও দেখান তিনি৷ কিন্তু তাঁদের রাগে অবশ্য আমল দেননি কেউই৷ ছেলে-বৌমা, নাতি-নাতনিদের আবদারে বেশিক্ষণ রাগ ধরে রাখতেও পারেননি তাঁরা৷ সকলের কথায় গলে যায় তাঁদের মন৷ অবশেষে সেই রাতে দাদু হাজির হলেন একেবারে  বরের সাজে৷ গলায় রজনীগন্ধার মালা, গায়ে পাঞ্জাবী৷ অন্যদিকে, দিদিমাকে এলেন নববধূর সাজে৷ লাল টুকটুকে বেনারসী পরে৷ হাজির হন আমন্ত্রিত আত্মীয়-স্বজনেরাও৷ জমে ওঠে বিয়ে বাড়ি৷ সানাইয়ের সুরে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন ‘নব দম্পতি’৷