কলকাতা: চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই কলকাতাসহ সমগ্র দক্ষিণবঙ্গ জুড়েই বহু প্রত্যাশিত বর্ষণের দেখা মিলেছে। সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ঝড়ও। এর জেরে এপ্রিলের শুরু থেকে চলা তীব্র দাবদাহের হাত থেকে অবশেষে রেহাই মিলেছে রাজ্যবাসীর। গত সপ্তাহের শুক্র-শনির পরে, চলতি সপ্তাহের সোম মঙ্গলও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বুধেও কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় আকাশের মুখ ভার। এর মধ্যেই গোটা সপ্তাহ জুড়েই দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গে তো আপাতত বৃষ্টি চলবেই, সেইসঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে সপ্তাহ জুড়ে। জানা যাচ্ছে দক্ষিণ আন্দামান সাগরে ঘনীভূত হয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত, যার জেরে আন্দামান এবং নিকোবরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ঘূর্ণাবর্তই শক্তি সঞ্চয় করে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। আর তার জেরেই বাংলায় এই বৃষ্টিপাত। তবে আগামী দিনে এই ঘূর্ণাবর্তের জেরে বাংলার আবহাওয়ার ঠিক কতটা পরিবর্তিত হবে আপাতত সেই দিকেই নজর রাখছেন আবহাওয়াবিদরা।
এর সঙ্গেই আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস শনিবার পর্যন্ত রাজ্যে ঠিক এই ভাবেই বৃষ্টি জারি থাকবে। জানা যাচ্ছে নিম্নচাপ অক্ষরেখায় নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় এবং বঙ্গোপসাগর থেকে রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প প্রবেশ করার কারণেই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় দফায় দফায় বৃষ্টি হচ্ছে।
তবে আপাতত দক্ষিণ আন্দামান সাগরের এই ঘূর্ণাবর্তের উপরে নজর রাখছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। জানা যাচ্ছে এর প্রভাবে শুক্রবার নাগাদ একটি নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হতে পারে এবং আগামী দিনে এই নিম্নচাপের শক্তি আরও বাড়বে। তারপর সেটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদদের একাংশ। আন্দামান সাগরের এই ঘূর্ণাবর্তটি ওড়িশার দিকে এগোতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, যদিও মৌসম ভবনের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত এর গতিবিধি সম্পর্কে বিশদে কিছু জানানো হয়নি এবং সেইসঙ্গে ঘূর্ণাবর্ত পরবর্তীতে সাইক্লোনে রূপান্তরিত হবে কিনা সে বিষয়েও কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। কিন্তু তারপরেও এই ঘূর্ণাবর্তের উপরেই আপাতত নজর রাখছেন আবহাওয়াবিদরা।
অন্যদিকে জানা গিয়েছে, বুধবার দক্ষিণবঙ্গের বেশকিছু জেলায় ফের ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।বৃষ্টি হতে পারে দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, দুই বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়াতে। বৃষ্টির সঙ্গে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াও বইতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে কালবৈশাখি সম্ভাবনাও। বুধের পরে বৃহস্পতিবারও দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সবকটি জেলাতেই ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া এবং তার সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর। শুক্রবার অবশ্য কলকাতায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই তবে কলকাতা, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়া ছাড়া বাকি জেলাগুলিতে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। হালকা বৃষ্টির ধারা বজায় থাকবে শনিবারও। রবিবারও পশ্চিমের বেশকিছু জেলায় হালকা বৃষ্টি হলেও হতে পারে। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে সোমবারের আগে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি ঝড় বৃষ্টির হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।
দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও একই ভাবে চলছে বৃষ্টির ব্যাটিং। সোম এবং মঙ্গলবার কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলাগুলিতে যেমন বৃষ্টিপাত হয়েছে ঠিক তেমনই দার্জিলিং, কোচবিহারসহ উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলাগুলিতেও বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে খবর। আগামী দিনে উত্তরবঙ্গেও এই বৃষ্টিপাতের ধারা বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।