ফুঁসছে আমপান, ফাঁকা করা হল উপকূল, চরম আশঙ্কা মুখ্যমন্ত্রীর! নবান্নে চালু কন্ট্রোল রুম

ফুঁসছে আমপান, ফাঁকা করা হল উপকূল, চরম আশঙ্কা মুখ্যমন্ত্রীর! নবান্নে চালু কন্ট্রোল রুম

কলকাতা:  একদিকে ফুঁসছে করোনা, অন্যদিকে, ঘরে ফিরছেন হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক৷ এরই মধ্যে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আমপান৷ এই অবস্থায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রত্যেক রাজ্যবাসীকে সচেতন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ 

তিনি বলেন, অনেকেই বলছেন আয়লার থেকেও ভয়ঙ্কর হবে এই ঘূর্ণিঝড়৷ আজ থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে৷ আগামীকাল সারা দিন বৃষ্টি থাকবে৷ তবে আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, বুধবার দুপুর ২টোর সময় প্রবল বেগে সাগরে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় আমপান৷ মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ৷ বৃহস্পতিবার সকালে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের দিকে ঘুরে যাবে এই ঘূর্নিঝড়ের মুখ৷ 

মুখ্যমন্ত্রী বারবার সতর্ক করে বলেন, ঝড় থেমে গেলেই কেউ বাইরে বেড়িয়ে যাবেন না৷ কারণ এই ঝড়ের তিনটি অংশ রয়েছে৷ মাথা, চোখ আর লেজ৷ প্রথমেই আঘাত হানবে মাথা৷ এর পর ঝড় থামলেও, সেটা কিন্তু হবে সাময়িক৷ মাথার পরই আঘাত হানবে চোখ এবং সবশেষে ওলটপালট করবে লেজ৷ লেজের ঝাপটাতেই সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে চলে যাবে৷ এই সময় কেউ যেন সমুদ্রে না যান, বারবার সেই অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি৷

মুখ্যমন্ত্রী পুরনো কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, এর আগে ফনি ঝড়ের সময় লেজের আঘাতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল৷ আগামীকাল কেউ বাড়ির বাইরে যাবেন না৷ আবহাওয়াবিদরা আজকে যেটি প্রাকৃতিক অরেঞ্জ জোন ঘোষণা করেছেন, কালকে সেটি রেড জোনও হয়ে যেতে পারে৷ মোট তিনটে ধাক্কা সামলাতে হবে৷ 

ঘূর্ণিঝড়ে কী হবে, তা বলা সম্ভব নয়৷ তবে সমুদ্র উপকূলবর্তী সাগর, মৌসুমি দ্বীপ, কাসারগঞ্জ, গোসাবা, নামখানা, কাকদ্বীপ, বাসন্তী এবং ক্যানিংয়ে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা৷ উত্তর চব্বিশ পরগণার উপরেও আঘাত হানবে আমপান৷ বসিরহাট, সন্দেশখালি, হাসনাবাদের উপর দিয়ে বয়ে যাবে ঘূর্ণিঝড়৷

পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর, খেজুরি, সুতাহাটার মতো জায়গাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশেও ঘূর্ণীঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবরকম ভাবে প্রস্তুত রয়েছে সরকার৷ পরশু দিন থেকেই মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে কাজ শুরু করে দিয়েছে টাস্ক ফোর্স৷ প্রতিটি জেলা শাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে৷ পুলিশ-প্রশাসনের নিচুতলাতেও সতর্ক করা হয়েছে৷ 

ইতিমধ্যেই অস্থায়ী শেল্টার, বন্যার জন বিশেষ শেল্টার রয়েছে রাজ্যের হাতে৷ সেখানে অনেক মানুষকে রাখার বন্দোবস্ত আছে৷ কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটাও প্রয়োজন৷ প্রয়োজনে কাপড়ের আঁচল বা গামছাকে মাস্কের মতো ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, যতটা সম্ভব স্যানিটাইজেশন করা হয়েছে৷ মাস্ক, বাচ্চাদের জন্য বেবি ফুড, পানীয় জল, খাবার, শৌচালয়ের বন্দোবস্ত করা হয়েছে৷ হেলথ  স্ক্রিনিংয়ের বন্দোবস্তও করা হয়েছে এই শেল্টারগুলিতে৷ এই দুর্যোগে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যায়৷ তাই সাইক্লোন সেন্টারে যতটা সম্ভব সতর্কতা মেনে চলবেন৷ 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা থেকে ইতিমধ্যেই প্রায় ২ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ উত্তর চব্বিশ পরগণা থেকে ৫০ হাজার মানুষকে সরানো হয়েছে৷ পূর্ব মেদিনীপুরে ৪০ হাজার এবং পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ 

বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে গিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী৷ সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ বলা হয়েছে, যাঁদের বাড়ি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা আছে, তাঁরা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে ত্রাণ শিবিরে চলে আসেন৷ 

অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রতিদিই প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক রাজ্যে আসছেন৷ প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছেন৷ তাঁদের গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে৷ আরও বেশি সংখ্যায় শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে ট্রেনের বগি বাড়ানোর সুপারিশও করা হচ্ছে৷ তবে এই দুর্যোগের জন্য আগামী কাল কোনও ট্রেন চলানো হবে না৷ আমপান নিয়ে এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী৷  কনট্রোল রুমের নম্বরও দেওয়া হয়েছে৷ সেগুলি হল ২২১৪৩৫২৬ এবং ২২১৪১৯৯৫ ৷ টোল ফ্রি নম্বর ১০৭০ ফোন করা যাবে৷

সঠিক খবর পেতে নজর থাকুক AajBikel.com-এর পাতায়…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *