তৃণমূল-বিজেপির পথের কাঁটা হওয়াই লক্ষ্য সিপিএমের? কোথায় গেল গর্বের ৩৪ বছর

তৃণমূল-বিজেপির পথের কাঁটা হওয়াই লক্ষ্য সিপিএমের? কোথায় গেল গর্বের ৩৪ বছর

দেবময় ঘোষ: সিপিএম ও বামফ্রন্ট কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়ায় যাচ্ছে। এ কি কেবল ভোট বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে? নাকি বিকল্প একটি সরকার গঠনের সুযোগ তৈরি করতে।

কিছুদিন আগেই গণশক্তি পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকারে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়ায় যাচ্ছে, বিষয়টি এমন নয়। সিপিএম-র দেশব্যাপী অবস্থানই হল ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতান্ত্রিক কাঠামো, সাধারণতন্ত্র রক্ষায় যে-সমস্ত শক্তি ইচ্ছুক, তাদের ঐক্য গড়ে তোলা। একেক রাজ্যের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তার চেহারা স্থির হবে। সিপিএম কারোর অধীনস্থ নয়, কারোকে আমাদের অধীনস্থ হতেও বলছি না। বিহারের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আরজেডি-কংগ্রেসের সঙ্গে বামপন্থীদের ঐক্য হয়েছে। তামিলনাডুতে আমরা ডিএমকে-র সঙ্গে ঐক্য গঠন করব। পশ্চিমবঙ্গেও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির ঐক্য গঠনের আলোচনাই চলছে। বিজেপি-বিরোধী, তৃণমূল-বিরোধী শক্তিগুলির ঐক্য গঠনের প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। একে শুধু কংগ্রেসের সঙ্গে ঐক্য বলে দেখা উচিত নয়। এই হল সিপিএম-র অবস্থান।

এখন প্রশ্ন, বাম-কংগ্রেস জোট কী বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে আটকাতে পারবে? ২০১৪ সালের লোকসভা এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম এবং কংগ্রেসের ভোট শতাংশের হিসাবে যুক্ত করলে ৪০-৪৫ শতাংশ হয়। আবার ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগেই বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষা বলে এসেছিল, বাম কংগ্রেস ৫ থেকে ৭ শতাংশ ভোট পাবে। তা-ই হয়েছে, বাম প্রায় ৭ শতাংশ, কংগ্রেস প্রায় ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। মোট ১২ শতাংশের মত। এখন প্রশ্ন, যে ৪০ শতাংশ ভোট তারা ২০১৪ এবং ২০১৬ তে মিলিত ভাবে পেয়েছিল তার কি হল। উত্তর, তার থেকে ২৮ শতাংশ বিজেপি পেয়েছে।

বিজেপির ৪০ শতাংশ ভোটের হিসাবটি হল, ২৮ শতাংশ সিপিএমের ভোট। ১০ শতাংশ পকেট ভোট। হল, ৩৮ শতাংশ। তৃণমূল শেষ বিধানসভায় পেয়েছিল প্রায় পঁয়তাল্লিশ শতাংশ। সেখান থেকে তাদের ভোট কমেছে সামান্য। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তারা ৪৩ শতাংশের মত ভোট পেয়েছে। বাকি দুই শতাংশ গেছে বিজেপিতে।

সুতরাং, অংকের হিসাব বলছে, কং-বাম জোট গত চার বছরে বিশেষ কিছু লাভ করতে পারেনি। বাম-কং ভোট একত্রিত হয়ে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। তবে হ্যা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিজেপির গতিপথ আটকে তৃণমূলকে জিততে সাহায্য করেছে। কিন্তু, দুটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান কী লক্ষ্যে কাজ করছে তা ঠিক করতে হবে। তারা কি আগামীদিনে বিজেপি এবং তৃণমূলের পথের কাঁটা হয়ে থাকতে চায়, নাকি সরকার গড়তে চায়, তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *