সাড়া জাগিয়ে‌ শুরু হলেও সিপিএমের ‘পাহারায় পাবলিক’ কর্মসূচি হঠাৎ থমকে গেল কেন?

সাড়া জাগিয়ে‌ শুরু হলেও সিপিএমের ‘পাহারায় পাবলিক’ কর্মসূচি হঠাৎ থমকে গেল কেন?

CPM

নিজস্ব প্রতিনিধি: তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চুরি, দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে সিপিএম বিশেষ একটি কর্মসূচি শুরু করে, যা রীতিমতো সাড়া ফেলে দেয় গ্রাম বাংলায়। যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘পাহারায় পাবলিক’।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক  হওয়ার পর মহম্মদ সেলিমের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘পাহারায় পাবলিক’ রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে ওঠে। রাজ্য জুড়ে তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের একাংশ দুর্নীতিতে জড়িয়ে রয়েছেন, এই অভিযোগে সরব হয়েছে সিপিএম। সেই সঙ্গে তাঁদের নাম এবং সম্পত্তির তালিকা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে বলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সেই সময় ঘোষণা করেছিলেন। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছিল ‘পাহারায় পাবলিক’। সেই সংক্রান্ত একাধিক তালিকাও প্রকাশ করে তারা।

সিপিএম জানায় দলীয় স্তরের পাশাপাশি এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আলিমুদ্দিনের অভিযোগ তৃণমূলের বহু নেতানেত্রী আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত। আর বেআইনিভাবে টাকা রোজগার করে তাঁদের অনেকেই নাকি প্রাসাদোপম বাড়ি, গাড়ি করেছেন। জেলা ধরে ধরে সেই তালিকা তৈরি করা হয়। গুগল ফর্মের মাধ্যমে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। এরপর আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে আলিমুদ্দিন সেই সময় জানিয়েছিল। তখন সিপিএম নেতাদের বলতে শোনা গিয়েছে, দুর্নীতি রুখতে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সাড়া জাগিয়ে এই কর্মসূচি সিপিএম শুরু করলেও বিগত প্রায় এক বছর ধরে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন এই কর্মসূচির কথা সিপিএমের কোনও নেতাকর্মীর মুখেই শোনা যায় না। অথচ যত দিন যাচ্ছে ততই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আরও দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসছে। সদ্য রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সিপিএমের ‘পাহারায় পাবলিক’ কর্মসূচি উধাও হয়ে গিয়েছে।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক আসন জিতে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফের ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। সিপিএম তথা বামেরা সেই প্রথম রাজ্যে শূন্য হয়ে যায়। একই অবস্থা হয়েছে কংগ্রেসেরও। কিন্তু সিপিএম মনে করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যদি গ্রামবাংলা জুড়ে আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে করা যায়, তাহলে ভোটবাক্সে অবশ্যই তার ফল মিলবে। সেই ভাবনা থেকেই শুরু হয়েছিল ‘পাহারায় পাবলিক’ কর্মসূচি। উল্লেখ্য সিপিএম যখন থেকে ‘পাহারায় পাবলিক’ শুরু করেছে তখন থেকেই রাজ্যজুড়ে এসএসসি দুর্নীতি অন্য মাত্রা নিতে শুরু করেছিল।

তাই ‘পাহারায় পাবলিক’ কর্মসূচি রাজ্য জুড়ে আরও বিস্তার লাভ করবে এমনটাই ভেবেছিলেন বাম কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে তবে কী আন্দোলনের ইস্যু খুঁজতে সিপিএম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে? কোন কোন ইস্যু সামনে রেখে আন্দোলনে ঝাঁপালে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে তা কী ঠিক করতে পারছে না আলিমুদ্দিন? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। রাজনৈতিক মহল মনে করে ‘পাহারায় পাবলিক’ এই নামের মধ্যে একটা ‘জোশ’ ছিল।  ধারাবাহিকভাবে এই কর্মসূচি চালাতে পারলে সিপিএমের নীচুতলার কর্মী-সমর্থকরা যথেষ্ট চাঙ্গা হতেন। কিন্তু বাস্তবে সেটা দেখা যাচ্ছে না। তাই আগামী দিনে এই কর্মসূচি সিপিএম ফের শুরু করে কিনা সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × one =