কলকাতা: রাজ্যে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও বেশি করে কোভিড হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর৷ কোভিড হাসপাতাল গড়তে এবার তাই তালিকায় জুড়তে চলেছে স্কুল ও ট্যুরিস্ট লজ৷
সংক্রমণের গোড়াতেই কোভিড হাসপাতাল গড়তে নেওয়া হয়েছিল স্টেডিয়াম৷ এবার স্কুল ও লজের পালা৷ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মালদার মাণিকচকের মডার্ন স্কুলকে ৫০ বেডের হাসপাতালের রূপ দেওয়া হচ্ছে৷ পাশাপাশি দার্জিলিংয়ের লামাহাটা এবং রামপুরহাটের ট্যুরিস্ট লজেও তৈরি হচ্ছে কোভিড হাসপাতাল৷
ইতিমধ্যেই রাজ্যে ফিরেছে কয়েক লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক৷ সেই সঙ্গে শুরু হয়ে গিয়েছে আনলক ওয়ান৷ যার ধাক্কায় গত ১০ দিনে রাজ্যে এক লাফে বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা৷ গত ২৫ মে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩,৮১৬৷ সেখানে ৫ জুন সেই সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ৭,৩০৩-এ৷ যে গতিতে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারের গণ্ডি ছুঁয়ে ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ফলে পরিস্থিতি মোকাবিলার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর৷
রাজ্যে আরও ১১টি কোভিড হাসপাতাল চালু করা হচ্ছে৷ এর মধ্যে ৮টি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে৷ হাসপাতালগুলিতে বাড়ানোর হচ্ছে বেডের সংখ্যা৷ শুক্রবার এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, করোনা রোগী শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় যাতে কোনও খামতি না থাকে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ কোভিড হাসপাতালের বেড সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ হাজারের বেশি করা হচ্ছে৷ টেস্টিং ল্যাবের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে৷
শুধু শহরাঞ্চল নয়, বাংলার গ্রামেও হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা৷ স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আক্রান্তের মধ্যে শতকরা ৩০ শতাংশই গ্রামের মানুষ৷ যা স্বভাবতই প্রশাসনের কাছে উদ্বেগ বিষয়৷ তাঁদের যথাযথ চিকিৎসার বন্দোবস্ত করাটা একটা চ্যালেঞ্জ৷ ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ টি জেকব জন বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ এখন ঊর্ধ্বমুখী। এই অবস্থায় সংক্রমণ পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব নয়৷ তার উপর শুরু হয়েছে আনলক ওয়ান। এই অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত গ্রামবাসীরা যাতে দ্রুত চিকিৎসা পায়, প্রতিটি রাজ্য সরকারকেই সেদিকে নজর রাখতে হবে৷ যে রাজ্য পারবে, সে রাজ্যে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমবে৷’’
এই পরিস্থিতিতে মূলত তিনটি বিষয়ে নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব। প্রথমত, জেলা এবং মহকুমাস্তরে কোভিড টেস্টের ব্যবস্থা করা। রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বেসরকারি ল্যাব ছাড়াও এমআর বাঙুর-সহ সাতটি জেলা হাসপাতাল এবং পাঁচটি মহকুমা হাসপাতালে করোনা টেস্টিং হচ্ছে। মহকুমাস্তরে করোনা টেস্টিং ল্যাবের সংখ্যা আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে জানানো হয়েছে৷
দ্বিতীয়তটি হল হাসপাতাল পরিকাঠামো সংক্রান্ত বিষয়৷ শুক্রবার স্বাস্থ্যভবনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর স্বাস্থ্যসচিব জানান, ১১টা নতুন কোভিড হাসপাতাল চালু করা হচ্ছে৷ সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজকে ৫০০ বেডের কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ১৫টি কোভিড হাসপাতালের মানোন্নয়নও করার পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে বেডের সংখ্যা৷ স্বাস্থ্যভবনের সূত্র অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, শিলিগুড়ি, দুই দিনাজপুর, পূর্ব-পশ্চিম বর্ধমান, রামপুরহাট, হুগলি, মুর্শিদাবাদের প্রায় ১৪টি কোভিড হাসপাতালকে টার্সিয়ারি কেয়ার দেওয়ার (লেভেল-৪) জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির জন্য চিহ্নিত করা হচ্ছে নতুন কোভিড হাসপাতাল। বাড়ছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোভিড রোগীদের জন্য বেড।