কলকাতা: ‘প্রেমে পরা বারণ, কারণে অকারণ, আঙুলে আঙুল রাখলেও হাত ধরা বারণ!’ আমাদের সমাজ কিন্তু প্রেমের সম্পর্ককে আজও খোলা মনে নিতে পারেনি৷ অনেক পরিবারেরই এতে আপত্তি রয়েছে৷ আর ছেলে-মেয়েদের খোলামেলা মেলামেশাতো নৈব নৈব চ! কিন্তু তরুণ প্রেমের জোয়ারে বারবার ভেঙেছে প্রাচীর৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে প্রেমের ধরণ৷ এক সময় চিঠি লিখে প্রেম নিবেদন চলত৷ এখন হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকের যুগ৷ পার্ক বা সিনেমা হলে যুগলদের অবাধ বিচরণ৷ তবে সে সব ছড়িয়ে এখন অ্যাপ হোটেলে তাঁদের ‘আপনা টাইম’!
আজকাল কিশোর-কিশোরীদের গন্তব্য অ্যাপ হোটেল৷ জোড়ায় জোড়ায় ছেলে মেয়েরা সেখান ঢুকছে বেরচ্ছে৷ বুক ভরে নিচ্ছে মুক্তির স্বাদ৷ যেখানে হাতে হাত রাখলেই মানুষের বাঁকা চাউনি, সেখানে খনিকের ব্যক্তিগত সময় সত্যই মূল্যবান৷ যদিও এতেও রাগ নীতি পুলিশদের৷ এভাবে ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশা মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা৷ মনে মনে ভাবছেন সমাজটা বুঝি রসাতলে গেল৷ ভাবনাতেই শেষ নয়, অনেকে আবার নালিশ জানিয়েছেন পুলিশের কাছেও৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক নিজেদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে একান্তে সময় কাটাতে চাইলে বাকিদের আপত্তি কীসে? এতে আইনি বাঁধাও নেই৷
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে কলকাতায় ২,২০০টির মতো অ্যাপ হোটেল আছে৷ কলকাতার বাইরে সংখ্যাটা প্রায় পাঁচ হাজার৷ মহানগরের পুরনো হোটেল, গেস্ট হাউসগুলির বড় অংশও এখন অ্যাপ হোটেলে পরিণত হয়েছে৷ সেখানে ঘণ্টার হিসাবেও পাওয়া যায় ঘর৷ সখানেই অনেকে কিছু সময় কাটিয়ে নেন প্রেমিক যুগল৷ আর তাতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে প্রাচীনপন্থী সমাজ৷
পার্ক সার্কাসের এমনই এক অ্যাপ হোটেলের মানিক ইউনুস মালিক বলেন, ভারতে অবিবাহিত যুগল বা সিঙ্গেল ছেলেদের হোটেলের রুম ভাড়া পেতে সমস্যা হয়৷ ছেলে মেয়েরা বিবাহিত বললে দেখতে চাওয়া হয় শাঁখা সিঁদুর, মঙ্গলসূত্র৷ পদবীতে ফারাক থাকলেও হ্যাঁপা পোহাতে হয়৷ এক্ষেত্রে অনেকটাই কাপল ফ্রেন্ডলি এই অ্যাপ হোটেল৷ এখানে শুধু পরিচয়পত্র দেখালেই হয়৷
এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী পাওলি দাম বলেন, ‘দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ যদি একে অন্যের সঙ্গে সময় কাটাতে চান, তাতে আমিকোনও সমস্যা দেখি না৷ সমাজের একটা অংশের চিরকালই সমস্যা থাকে৷ মানুষ যুদ্ধ না করে যদি প্রেম করেন, সেটা তো ভালোই’৷
তবে প্রেমের শত্রু সর্বত্রই৷ সম্প্রতি প্রেমের উপর ফতোয়া জারি করেছিল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়৷ কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের জেরে পিছু হঠতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ পড়ুয়াদের অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নীতি-পুলিশ করছেন৷ যা প্রাপ্ত বয়স্ক পড়ুয়াদের গণতান্ত্রিক পরিসর ব্যাহত করছে৷ তবে শেষ পর্যন্ত জানা গিয়েছে, ক্যাম্পাসে যুগলদের ব্যক্তিগত আলাপচারিতা বা একান্ত মুহূর্ত কাটানোর ক্ষেত্রে নজরদারি চালাতে গঠিত শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক আর বসবে না৷ যে সকল পড়ুয়ার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি বসেছিল, তাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে৷