corruption
নিজস্ব প্রতিনিধি: সদ্য রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছেন বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এর আগে গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একই ভাবে জেলে রয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের পাশাপাশি একাধিক তৃণমূল বিধায়ক ও বিভিন্ন স্তরের নেতা। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই কোটি কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেই সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল রাজ্য রাজনীতিতে চরম অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। তৃতীয়বার বিপুল সংখ্যক আসনে জিতে ক্ষমতায় আসলেও মানসিকভাবে তৃণমূল এখন বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। এর প্রভাব নির্বাচনে পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এই অবস্থায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বামেদের নিশানা করছেন। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার বলেছেন বাম আমলে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। চিরকুট দিয়ে চাকরি হয়েছে বাম আমলে, এই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী করার পর বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট আন্দোলিত হয় রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূলের অন্যান্য নেতারাও একই অভিযোগ বহুবার করেছেন। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে যেভাবে বাম শাসনের বিরুদ্ধে চাকরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করে থাকেন তৃণমূল নেতারা, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য তাঁদের হাতে আছে কি? তাই পাল্টা সিপিএমের প্রশ্ন, ১২ বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। বাম আমলের একাধিক বিষয় নিয়ে কমিশন বসিয়েছে তৃণমূল সরকার। কিন্তু সেই সমস্ত কমিশনের একটি রিপোর্টেও বাম জমানার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলি সম্পর্কে প্রমাণ তুলে ধরতে দেখা যায়নি। এমনটাই দাবি সিপিএম নেতাদের। এই বিষয়টি নিয়ে কোনও যোগ্য জবাবও তৃণমূল নেতাদের দিতে দেখা যায় না।
জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শাসনকালে সিপিএমের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাকরি বিক্রি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে টাকা নিয়ে দলের নেতা-মন্ত্রীরা বিপুল সম্পত্তির মালিক হচ্ছেন, এমন অভিযোগ ওঠেনি। অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া বা অন্যান্য ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ নেই ৩৪ বছরের বাম সরকারের বিরুদ্ধে। তবে সিপিএমের বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে বেলাগাম সন্ত্রাসের অভিযোগ বারবার উঠেছে। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হচ্ছে, স্থানীয় নেতাদের কথামতো না চললে নিদারুণ অত্যাচার করা হচ্ছে, এমন হাজারো অভিযোগ রয়েছে লাল জমানার বিরুদ্ধে। কিন্তু আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ কার্যত নেই বললেই চলে। বুদ্ধবাবুর অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন নিয়ে বহু চর্চা হয়েছে। তাঁর আমলে সরকার আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়েছে, এ কথা কেউই বলার সাহস পাবেন না। তা সত্ত্বেও তৃণমূল নেতারা অতীতের বাম সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ মাঝেমধ্যেই তুলে থাকেন। ওয়াকিবহাল মহল মনে করে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে নজর ঘোরাতেই তৃণমূল বামেদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নিশানা করে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন, যে অভিযোগ করে থাকে তৃণমূল, তা কী আদৌ কোনও দিন প্রমাণ হবে? নাকি শুধু এগুলি বলার জন্যই বলা? এই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।