বালুরঘাট: পিতৃপক্ষের অন্ত হয়ে দেবীপক্ষের সূচনাই মহালয়া। দেবীর আগমণের ভূমিকা বেঁধে দেয় এই শুভ দিনটি। এই দিনটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল, তর্পণ। তর্পণ কথাটি সংস্কৃত ত্রুপ ধাতু থেকে এসেছে। যার অর্থ তৃপ্তি প্রদান। ফলে তর্পণের অর্থ পিতৃপুরুষকে জল দান করে তৃপ্তিবিধান করা।
গঙ্গা বা যেকোনও জলের উৎসের ওপর দাঁড়িয়ে নানা উপাচারে পালন করা হয় তর্পণ। বলা হয় মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষের আত্মারা পৃথিবীর খুব কাছেই থাকেন, তাই তাদের উদ্দেশে প্রদত্ত বা উৎসর্গীকৃত জল এসময় সরাসরি তারা পান বলে মনে করা হয়। আবার অনেকে মনে করেন মহালয়া কথাটি এসেছে 'মহত্ আলয়' থেকে।
হিন্দু ধর্মে মনে করা হয় যে পিতৃপুরুষেরা এই সময়ে পরলোক থেকে ইহলোকে আসেন জল ও পিণ্ডলাভের আশায়। প্রয়াত পিতৃপুরুষদের জল-পিণ্ড প্রদান করে তাঁদের 'তৃপ্ত' করা হয় বলেই মহালয়া একটি পূণ্য তিথি। মহালয়ার পূণ্য তিথিতে বাঙালি তার পিতৃপুরুষের স্মৃতিতে তর্পণ করে থাকে। সারাবাংলার সাথে সাথে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরের আত্রাই নদীর ঘাটেও চলে এই তর্পণ অনুষ্ঠান। সকাল থেকে বালুরঘাট শহরে চলছে রিমঝিম বৃষ্টি। আর সেই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই অনেককেই দেখা গেল তর্পণ করতে।
কিন্তু করোনা আবহে অন্যবছরের তুলনায় তর্পণকারীর সংখ্যা এবার অনেকটাই কম। ভাইরাসের আতঙ্কে বাড়ি থেকেই বেরোননি অনেক মানুষ। সচেতনাতা মানতে গিয়ে বঞ্চিত হয়েছেন বছরের পর বছর ধরে মেনে আসা আচার থেকে। অল্প কয়েকজন যারা তর্পণ করতে এসেছিলেন তারাও নিয়ম রক্ষা করে যতটা তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছানো যায় সেই চেষ্টাতেই ছিলেন।
তর্পণকারীরা চাইছেন সব মিটে গিয়ে পুজোতে আনন্দ হোক। আগের মত পুজোয় মেতে উঠুন মানুষ। এবছর সেভাবে তর্পণ অনুষ্ঠান পালিত না হলেও তর্পণকারীদের আশা আগামী বছর এই করোনা সংকট কেটে গেলে আবার তারা সবাই মিলে পিতৃ-পুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করতে পারবেন।